করোনাসহ বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে যথার্থ ‘গণপ্রজাতন্ত্রে’ রূপান্তর করতে প্রদেশ গঠনসহ সাত প্রস্তাব দিয়েছেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
শুক্রবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটসহ কয়েকটি অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতির অনেক অবনতি হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আজ দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা থাকলে এবং নিজ নিজ প্রদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সারাদেশকে এই অপরিকল্পিত লকডাউন বা শাটডাউনের আওতায় আনতে হতো না। কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আজকের বাস্তবতায় সমাজের সব মানুষের কাছে স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ অন্যান্য সেবা পৌঁছে দেয়া এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। আমেরিকার মতো দেশে ৩৩ কোটি লোকের জন্য ৫০টি স্টেট রয়েছে। তার বিপরীতে আমাদের ১৭ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমাদের দেশের সুষম উন্নয়ন ও জনগণের সর্বব্যাপী সুযোগ-সুবিধার লক্ষ্যে আট থেকে নয়টি প্রদেশ স্থাপন অতি প্রয়োজন।
বিবৃতিতে বলা হয়, তাহলে আজ কোটি কোটি লোককে কথায় কথায় করোনার ন্যায় দুর্যোগের মধ্যে ঢাকার কর্মস্থল থেকে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ির দিকে বা সেখান থেকে আবার রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটতে হতো না। প্রদেশ ও বিকেন্দ্রীকৃত প্রশাসনের কারণে সারাদেশে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর কর্ম এবং অবস্থানের অবারিত সুযোগ থাকত।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সশস্ত্র যুদ্ধের পর থেকে জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কেন্দ্রীভূত করার পদ্ধতি দিয়ে দেশ চালাতে গিয়ে রাষ্ট্রকে যথার্থ প্রজাতন্ত্রে রূপান্তর করার ধারেকাছেও পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। জনগণের ক্ষমতায়নের রাজনীতির আবেগ ও আদর্শের ওপর নির্ভর করে যে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল তার সবটাই ভূলুণ্ঠিত হতে থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের এককেন্দ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায়। এই অক্ষম, অদক্ষ ও দুর্নীতিনির্ভর কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তিলাভ না করলে দেশ মারাত্মকভাবে অনিয়ন্ত্রিত সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
রব বলেন, আজকের বাস্তবতায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাখার ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির বেড়াজাল থেকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত হতে হবে। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার রাজনীতি ও রাজনৈতিক কূটকৌশল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে আরো বড় ধরনের সংকটে ফেলবে। জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের বিভেদের পথ তৈরি হবে।
রাষ্ট্রকে যথার্থ গণপ্রজাতন্ত্ররূপে রূপান্তর অর্থাৎ জনগণের ক্ষমতায়ন, স্ব-শাসন ও সারাদেশে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে আশু করণীয় হিসেবে দেয়া সাতটি প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশে আট থেকে নয়টি প্রদেশ স্থাপন করে ‘ফেডারেল রাষ্ট্র’ কাঠামোর প্রবর্তন করা; প্রত্যেক প্রদেশে প্রাদেশিক সরকার গঠন করা; প্রত্যেক প্রদেশে ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট প্রাদেশিক পরিষদ গঠন এবং তাতে এক-তৃতীয়াংশ শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা; প্রতিটি প্রদেশে একজন মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা; প্রতিটি প্রদেশে ‘হাইকোর্ট’ স্থাপন করা; কেন্দ্রে জাতীয় সংসদের ‘উচ্চকক্ষ’ স্থাপন করা এবং তাতে প্রাদেশিক সরকারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা; স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং স্থানীয় সরকার কাঠামো কেন্দ্রীয় সরকারের শাখায় পরিণত করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্যমান ঔপনিবেশিক ধারার রাজনীতি অরাজক পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে, যা রাজনীতির কর্তৃত্বহীনতার পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক পরিবেশ ভেঙে পড়বে। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার উপযোগী রাষ্ট্রকাঠামো, শাসন পদ্ধতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে নৈতিক চেতনার নতুন সমাজব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে যথার্থ গণপ্রজাতন্ত্ররূপে রূপান্তর করাই হবে আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্য।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ