একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার একসময় যুক্ত ছিলেন বিএনপি-জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে। অথচ তার মৃত্যুতে পূর্বের দল দুটির পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়নি।
পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান মুসলিম লীগ, দেশ স্বাধীনের পর বিএনপি ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিচিত ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে।
১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান মুসলিম লীগের সিলেট জেলা শাখার সদস্য ছিলেন কায়সার। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিলেট-১৭ (বর্তমান হবিগঞ্জ-৪) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হন।
১৯৮২ সালে শাহ আজিজুর রহমান অংশের বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব নির্বাচিত হন কায়সার। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে চতুর্থ সংসদে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এরশাদের মন্ত্রিসভায় কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
বিএনপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। আর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই ছিল না। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুর বিষয়টি তারা জানেন না। তাছাড়া গত ১০-১৫ বছর ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ে সাতটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড, চারটিতে যাবজ্জীবন ও তিনটিতে মোট ২২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সৈয়দ কায়সারকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকে। একই বছরের ২২ অক্টোবর কায়সারের মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়। মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর আপিল বিভাগের রায় রিভিউয়ের আবেদন করেন তিনি। মোট ১৮টি যুক্তিতে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আপিল করেন তিনি। বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হলেও ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার দিন তাকে কারাগারের কনডেম সেলে পাঠানো হয়।
শুক্রবার ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ হার্টে একটি অ্যাটাকও ছিল তার।
সৈয়দ কায়সার ১৯৪০ সালের ১৯ জুন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ সঈদ উদ্দিন ও মাতার নাম বেগম হামিদা বানু। তিনি আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং বিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ