ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপিকে নিয়ে ভাবনায় শরিকরা

প্রকাশনার সময়: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৩২

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকার পতন আন্দোলনে যেতে নতুন করে হিসাব কষছে বিএনপি। এ জন্য জোটসঙ্গী ২০-দল, ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি সরকারবিরোধী সব দল ও মতগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে চাইছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি বিএনপির পক্ষ থেকে। নতুন পথে হাঁটার আগে বিএনপিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে জোটের শরিকরা।

জোট শীর্ষ নেতারা বলছেন, সরকার পতনের জন্য বৃহত্তর স্বার্থে তাদের নতুন জোট নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। একইসঙ্গে কিছু পরামর্শও রয়েছে তাদের। বিশেষ করে- জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে আগেভাগে কৌশল ঠিক করা। বিদ্যমান জোটগুলোকে সচল করাটাও এখন সময়ের দাবি। এর জন্য প্রয়োজনে জোটে সংস্কার করতে হবে। পুরনো ও অনেক দিনের ঝুলে থাকা সমস্যাগুলোরও সুরাহা চান তারা। অবশ্য শরিকদের কেউ কেউ নতুন উদ্যোগ নিয়ে সংশয়েও রয়েছেন।

তারা মনে করছেন, এমন অনেক দল আছে যারা নামসর্বস্ব। দলে নেতা ছাড়া কোনো কর্মী নেই। জোটে কিংবা রাজনীতির মাঠে তাদের ভূমিকা রাখার কোনো সক্ষমতাও নেই।

জোট নেতারা বলছেন, বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বাধীন জোটগুলোর বাইরেও অনেক দল আছে, যারা এই সরকারের পতন চায়। যে কারণে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে তাদের নীতিগত সমর্থন আছে। পুরো ব্যাপারটাকে সমন্বয় করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে জোটে এবং জোটের বাইরে অস্বস্তি রয়েছে। তবে ভোটের হিসেবে জামায়াতকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বিএনপির। আবার বৃহত্তর আন্দোলনের প্রশ্নে জামায়াত যে সমস্যা, এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। জামায়াতের কারণে অনেক রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে আসতে আগ্রহী ছিল না। আগামীতেও নতুন জোট গঠনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আগে এই বিষয়েও সুরাহা দরকার।

জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমরা চাই ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের সংস্কার হোক। সবাইকে একটা মঞ্চে আনা হোক। জামায়াতে ইসলামী যদি অন্তরায় হয়ে থাকে, তারা এখান থেকে সরে গিয়েও বৃহত্তর আন্দোলনে শরিক হতে পারে। এসব বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

জানা যায়, আন্দোলনের নতুন এই প্ল্যাটফর্মকে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ বলছে বিএনপি। এই সরকারের অধীন নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকার পতন ঘটাতে হবে। কীভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন ত্বরান্বিত করা হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ করতে নিজেদের জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে শিগগির ধারাবাহিক বৈঠক করবেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এরই মধ্যে সমমনা বাম, ডান ও ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। তবে আগে জোটের শরিকদের মতামত নেবে বিএনপি। এরই মধ্যে গত ২৯ জানুয়ারি জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি’র (এনপিপি) শীর্ষ নেতারা বেঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে জোটের অন্য শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে বেঠকে বসবেন বিএনপি।

বৃহত্তর জোট গঠনের বিষয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নয়া শতাব্দীকে বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে খুব শক্তিশালী যে সরকার, তাদের সরাতে গেলে সবার ঐক্যবদ্ধ একটা প্রচেষ্টা লাগবে। সেটা যে পন্থাতেই সম্ভব, সেই পন্থাই লাগবে। তবে এখনো এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি।

কিছুটা শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের চেয়ে দুই গুণ তিন গুণ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনৈতিক দল ২০ দলীয় জোটেও আছে, বাইরেও আছে। নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে প্রকাশ্যে না হলেও ঘরোয়াভাবে আলোচনা করতে হবে। আত্মসমালোচনা ব্যতীত কোনো পদক্ষেপ সফল নাও হতে পারে।

জামায়াতকে জোট গঠন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখলে জোটে টানাপোড়ন বাড়বে কি না- এমন প্রশ্নে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিএনপি-জামায়াত অনেক পুরনো ও অভিজ্ঞ দল। বিশ্বাস করি, যেটা মঙ্গল হবে তেমন সিদ্ধান্তই নেবে।

নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না নয়া শতাব্দীকে বলছেন, আমরা তো ঐক্য চাই। বৃহত্তর জোট হলেও আমরা চাই। অবশ্যই চাই। তবে আগের জোটকে রাখা হবে কিনা, সেটা এখনো পরিষ্কার না। নতুন জোট হবে। তাহলে পুরোনো জোটের কি হবে। নতুন জোট গঠনের বিষয়ে বিএনপিও যে খুব বুঝে বলছে, আমার মনে হয় না।

বিএনপি সূত্র জানায়, বাম-ডান দলগুলোর মূল আপত্তির জায়গা জামায়াত। ঐক্যপ্রক্রিয়ায় জামায়াত থাকলে না হাঁটার ইঙ্গিত তাদের। তাই জোটে থাকলেও জামায়াতকে নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে রকম পরিকল্পনা করছে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়েছে কয়েকবার। বিএনপি ছাড়লে সরকার আবার জামায়াতকে কাছে টানতে পারে এই আতংক রয়েছে। তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও বেগ পেতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, জামায়াতকে না রাখার ব্যাপারে সবাই একমত হলেও সরকার তাদের কাছে টানতে পারে সেটাও ভাবতে হচ্ছে। তাই এখনই জামায়াত নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ কম। পরিস্থিতি বলে দেবে।

জানতে চাইলে বিএনপি জোটের শরিক এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, বিএনপির মতো আমরাও যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্তে একমত। সে জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশেষ করে জামায়াতকে নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়, সেজন্য আগেভাগে কৌশল ঠিক করতে হবে। কারণ তাদের ছেড়ে দিলে সরকার নিয়ে নিতে পারে, তেমন ভয় তো এখনো আছে।

জোটের আরেক শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, বড় রাজনৈতিক দল ছাড়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নামসর্বস্ব। কোনটা আছে স্বামী-স্ত্রীর দল। তাই এসব দলের সঙ্গে বসলে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। সময় নষ্ট করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনকার যারা জামায়াতে আছে, তাদের মধ্যে তো যুদ্ধাপরাধী নেই। তাহলে তাদের নিয়ে আপত্তি কেন থাকবে!

সূত্রমতে, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ওই জোট এখন একেবারেই নিষ্ক্রিয়। ভাঙনের কবলে পড়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দল জোট ছেড়ে চলেও গেছে। তবে তাদের খণ্ডিত একটি অংশ জোটে থেকে গেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জোট সক্রিয় করার আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ