বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি সাড়ে তিন মাস আগে লন্ডনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানান তার চাচাতো ভাই আশিক উদ্দিন চৌধুরী। তবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির এক শীর্ষ স্থানীয় নেতা বলেন, বিষয়টি গুজব বলে মনে হয়।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য ও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়ে তার বোনেরা আমাকে নিশ্চিত করতে পারেননি। তার চাচাতো ভাই যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক বলে মনে হচ্ছে না।’
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের ছেলে ও মৌলভীবাজার বিএনপির সভাপতি এম. নাসের রহমান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। তবে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না।’ আর, হারিছ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারি জিয়াউল হাসান মুন্না জানান, ‘আমি শুনেছি। তবে নিশ্চিত নই।’
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর সামনে আসে তার ভাই আশিকের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে। গত মঙ্গলবার রাতে হারিছ চৌধুরী ও তার একটি ছবি সংযুক্ত করে তিনি লেখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। এরপর ওই স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাসহ অনেকে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ ও শোক প্রকাশ করে মন্তব্য করেন। এসব মন্তব্যের পরপরই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।বুধবার মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আশিক বলেন, ‘সর্বশেষ ওয়ান-ইলেভেনে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। গত বছর আমি যুক্তরাষ্ট্র ছিলাম। সে সময় আমি জানতে পারি হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন।
পরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন হারিছ চৌধুরি। গত সেপ্টেম্বর মাসের দিকে তিনি যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরী, ছেলে নায়েম শাফি চৌধুরী ও মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।’
হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।’
উল্লেখ্য, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। বর্তমানে সেই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে আসেন। রাত ১২টার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী আতিক মোবাইল ফোনে জানান, ঢাকায় বিএনপি নেতাদের বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তার আগেই তিনি সটকে পড়েন। কিছুদিন সিলেটে এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকার পর ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাতে ভারত চলে যান। ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি। সেখানেই তিনি ওঠেন। সেখান থেকেই বিদেশে যাতায়াত করতেন বলে জানা গেছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ