রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ আহ্বান জানান। সংগঠনের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এ সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার আবারও ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা কলাকৌশল করছে। সংলাপ, রাষ্ট্রপতি সংলাপ ডেকেছেন। কিসের সংলাপ? এই সংলাপ ইতিমধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছেন। এই সংলাপ অর্থহীন। কোনো লাভ হবে না। কারণ নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নাই, নির্বাচনকালীন যদি সরকার নিরপেক্ষ না হয়। তাই আমাদের কথা হচ্ছে, সবার আগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিন এবং পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে জনগণের ভোটের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন। এর বাইরে আর কোনো পথ নেই।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনসহ সবাইকে বলতে চাই আসুন, ‘‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র’র ভিত্তি এই দুটোকে একসঙ্গে করে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হই। ১৯৭১ সালে আমরা জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, লড়াই করেছিলাম এবং বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। তাই আবারও দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে সত্যিকারের একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করি। ’
গত দুই মাস ধরে দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিগত দুই মাস ধরে অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আন্দোলন করছি। সারা দেশে অসংখ্য সমাবেশ করেছি। প্রত্যেকটি সমাবেশ থেকেই লাখো মানুষের কন্ঠ থেকে একটি আওয়াজই বের হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে হবে। কেন দেশের মানুষ তার মুক্তি চায়। কারণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রতীক, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক, তিনি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়বার প্রতীক। এই কিছুই দেশনেত্রীর মুক্তি দিতে চান না। কেন চান না? তারা জানে দেশনেত্রী যদি মুক্ত হন, তাহলে জনতার যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে তাতে করে তারা (সরকার) টিকে থাকতে পারবে না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ১৩ হাজার মাইল দূরে রয়েছেন। ওয়ান ইলেভেন সরকার আটক করে নির্যাতন করে তাকে পঙ্গু করে দিয়েছিল হত্যার উদ্দেশ্যে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশে আসার পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আজকে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। আমাদের পাঁচ শতাধিক মানুষ গুম হয়ে গেছে। আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। দেশের মানুষ আজ আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। ’
জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির সামনে বক্তব্যে রেখেছেন। সেই বক্তব্যে বলেছেন, তিনি তার শাসন আমলে এদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে গেছেন। আর ২০৪১ সাল পর্যন্ত যদি তাকে আপনারা থাকতে দেন তাহলে এদেশে সে একটা শক্তিশালী, একটা সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করবেন। গত ১৩ বছরে এই দেশে মানুষ আরও গরীব হয়েছে। চার কোটির বেশি মানুষ বেকার হয়ে গেছে। ছয় কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। বড় লোক বড় লোক হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের লোকেরা যারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতার সুযোগগুলো গ্রহণ করছে তারা বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করে তাদের সম্পদকে রক্ষা করতে চাচ্ছেন।’
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ