ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতির সংলাপে না যাওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘অর্থহীন’ এই সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছিল। দুদিন পর বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। অংশ নিয়েছিল ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপেও।
এবার বিএনপি বলে আসছিল, নির্দলীয় সরকার না হলে কোনো নির্বাচন কিংবা সংলাপে যাবে না তারা। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে রাষ্ট্রপতি সংলাপ শুরুর পর বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, সংলাপের আমন্ত্রণ পেলে তখনই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
তবে বঙ্গভবন থেকে আমন্ত্রণ আসার আগেই বিএনপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিএনপি মনে করে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন সময়ের নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যাতীত নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনই স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না।
“বিএনপি বিশ্বাস করে, নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোনো নির্বাচন কমিশনই করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন, তার কোনো ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। সেই কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোনো ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারবে না। বিএনপি অর্থহীন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।”
বিএনপির আগে বাসদ (খালেকুজ্জামান) ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছিল বিএনপি।
সেই অভিজ্ঞতার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করেছিলো। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে।
“রাষ্ট্র যন্ত্রকে বেআইনি ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতার কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটারগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পর পর দুটো নির্বাচন কমিশনই চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”
সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার ‘গণতন্ত্র বিকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছে’ বলে দাবি করেছে বিএনপি।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। তার মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে ইসিকে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে তা গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ২০ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছেন।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ