বর্তমানে পরিবহন খাতে কিছু ব্যবসায়ীর নিকট দেশের জনগণ জিম্মি হয়ে আছে। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার দাবিটি যৌক্তিক। অতীতেও গণপরিবহনেও হাফ ভাড়া ছিলো। তাই এটি পুনরায় চালু করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

এসময় তিনি বলেন, পণ্য উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের দায়িত্ব বেশি। তবে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও নজরদারির ভূমিকা পালন করতে হবে। অবৈধ সিন্ডিকেট দ্বারা পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা অপরাধ। এই ধরনের অপরাধের জন্য দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। ভর্তুকি প্রদান একটি সাময়িক ব্যবস্থা। কোনভাবেই এটি দীর্ঘায়িত হতে পারেনা।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দরিদ্র মানুষকে স্বল্প মূল্যে নিত্য পণ্য সরবরাহ করা টিসিবির লক্ষ্য। তবে এই প্রতিষ্ঠানটি আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। কৃষক যেন উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের সহযোগিতা ও সড়কপথে চাঁদাবাজি সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অর্জন রয়েছে। এসব অর্জনের পাশাপাশি আয় বৈষম্য আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে এক শ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়লেও দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতা অনেক কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কতটা লাগামহীন টিসিবির খোলাবাজারে ট্রাকের পিছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখলে তা বুঝা যায়। করোনার কারণে যে আড়াই-তিন কোটি মানুষ নতুনভাবে দরিত্র হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি তাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। দেশে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই, হরতাল নেই। সরকার বলছে খাদ্যের মজুদ যথেষ্ঠ রয়েছে। কৃষকরাও কঠোর পরিশ্রম করে পর্যাপ্ত ফসল উৎপাদন করছে। তাহলে কেন দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি?

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘সম্প্রতি তেলের নাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিত্য পণ্যের বাজারে আরো বেশি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে গণপরিবহনের ভাড়া তেলের দাম বাড়ার চাইতেও অনেকগুন বেশি আদায় করা হচ্ছে। সারাজীবন শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া প্রদানের যে রীতি ছিলো তা প্রদানেও অস্বীকার করছে বেসরকারি বাস মালিকরা। সিএনজি চালিত বাসগুলোও তথ্য গোপন করে ডিজেল চালিত পরিবহন হিসেবে বেশি ভাড়া আদায় করছে। গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানো বা শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া প্রদানের জন্য সরকারের সাথে বাস মালিকদের যে মিটিং হয় তা দেখে মনে হয় মন্ত্রী আমলারা বাস মালিকদের প্রতিনিধত্ব করছেন। যা দুঃখজনক। অনতিবিলম্বে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া প্রদানের ঘোষণা বেসরকারি বাস মালিকদের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করছি।’

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন। সুপারিশগুলো হচ্ছে-

১. পণ্যের বন্টন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। ২.বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরি করা। অবৈধ মজুদ, কালোবাজারি ও চোরাচালান রোধে সরকারি সংস্থাসমূহের কার্যক্রম সমন্বয় করে আরো জোরদার করা।৩. অনৈতিক মজুদদারী ও অবৈধ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের দৃশ্যমান শাস্তি প্রদান এবং ট্রেড বড়ি সহ জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদেরকে মনোনয়ন না দেয়া। ৪. বাজারমূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৫. সড়কপথে পণ্য পরিবহনে অবৈধ টোল আদায় বন্ধ করে চাঁদাবাজদেরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ৬. পণ্য পরিবহনে রেলওয়ে সহ বিআরটিসিকে সম্পৃক্ত করা। ৭. আমদানী নির্ভর পন্যের যোগান নিশ্চিতকরণের জন্য রিজিওনাল ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনীয় চুক্তি ও সহযোগিতা নিশ্চিত করা। ৮. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যে নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অধিক পরিমানে পণ্য সরবরাহ করা। ৯. দুর্যোগজনিতকারণে পন্যের সাপ্লাইচেইন যেন ব্যাহত না হয় সেজন্য আগাম পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ১০. দ্রব্যমূল্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, পর্যালোচনা ও ফিডব্যাক সংগ্রহের জন্য বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে গবেষণা সেল চালু করা।

জিএম কাদের আরও বলেন, ‘দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। ক্রমশ মানুষ ভোট বিমুখ হচ্ছে। রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। ভোট বাক্স দখল করে নেওয়া হচ্ছে। জনগণ এর থেকে মুক্তি চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনকল্যানমূখী জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা করতে পারলে দ্রব্যমূল্যের নাম নিয়ন্ত্রিত হবে।’

প্রতিযোগিতায় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক কে পরাজিত করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক আরিফুর রহমান, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস, সাংবাদিক উম্মান নাহার আজমী ও আবুল বশির যান, এফসিএমএ। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

নয়া শতাব্দী/জেআই