ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্দোলনের ‘প্রাথমিক ধাপে’ বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৩২

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশে ২০ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কেরোসিন, ডিজেল, এলপি গ্যাসের দাম ও যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার মতো ইস্যুতে মাঠে নেমেছে দলটি। টানা প্রায় দেড় মাস ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। কর্মসূচিগুলো পালিত হবে পৃথকভাবে। মোট ৪১ দিন ধরে চলবে কর্মসূচি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের মাঠে নামার আগে নিজেদের সক্ষমতা দেখতে চায় দলটি। জনসম্পৃক্ত এ কর্মসূচিকে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে ‘প্রাথমিক ধাপ’ হিসাবে দেখছেন বিএনপির হাইকমান্ড।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, এবারের কর্মসূচি সফলভাবে পালন করতে জেলা নেতাদের কাঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালনে জেলা কমিটির সক্রিয় ভূমিকা দেখতে চায় হাইকমান্ড। এজন্য তাদের ঢাকায় না থেকে নিজ জেলার মূল দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে জনগণের হাতে হাতে লিফলেট পৌঁছানোর কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কর্মসূচি সফলভাবে পালন করা না হলে জেলা কমিটির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। একইভাবে দলীয় কর্মসূচি সফল করতে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে, ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার রাজধানী থেকে শুরু হয়েছে লিফলেট বিতরণ। চলবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। লক্ষ্য ইউনিয়ন, থানা, পৌর, উপজেলা পর্যায়ে জনগণের হাতে লিফলেট পৌঁছানো। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি লিফলেট বিতরণ টার্গেট দলটির। এতে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া জোট সরকারের আমলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও বর্তমান সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যে, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামের পার্থক্যও তুলে ধরা হয়েছে লিফলেটে। যাতে জনগণ বুঝতে পারে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পণ্যগুলোর দাম কতটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

দলটির একাধিক নেতা বলেন, দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে সারাদেশে বিএনপি ও তার ১১ অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের পুনর্গঠন কাজ চলছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরই মধ্যে বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৪টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা, পৌর কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী দলটির ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ও মহিলা দলের তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজও প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। এসব কমিটি গঠন নিয়ে দলটির মধ্যে নানা অভিযোগও রয়েছে। এ অবস্থায় কমিটির সক্ষমতা যাচাই করতে চান দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এছাড়া আগামী দিনে যারা নেতৃত্বে আসতে চান, তারা কে, কী ভূমিকা রাখছে সেদিকেও নজর রাখবে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব এবং সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেরোসিন, ডিজেল, এলপি গ্যাস ও যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারাদেশের ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা ও মহানগরে লিফলেট বিতরণ করা হবে। দেড় মাসব্যাপী এ কর্মসূচি ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। ১৫-১৯ নভেম্বর ৫ দিন বিএনপি, ২৪ নভেম্বর থেকে তিন দিন যুবদল, ২৬ নভেম্বর থেকে তিন দিন কৃষক দল, ২৯ নভেম্বর থেকে তিন দিন স্বেচ্ছাসেবক দল, ৩ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন ছাত্রদল, ৫ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন মুক্তিযোদ্ধা দল, ৮ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন ওলামা দল, ১১ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন মৎস্যজীবী দল, ১৭ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন জাসাস, ২০ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন তাঁতী দল, ২৩ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন মহিলা দল ও ২৬ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন শ্রমিক দল সারাদেশে লিফলেট বিতরণ করবে। এই কর্মসূচি শেষ হলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হবে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সম্প্রতি বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের ধারাবাহিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে স্থায়ী কমিটিতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বর্তমান সরকারকে সরাতে আন্দোলনই একমাত্র পথ। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের এক দফা দাবিতে সেই আন্দোলন হবে। তবে কী ধরনের কর্মসূচির ভিত্তিতে আন্দোলন সফল হবে, কখন ঘোষণা করা হবে- তা নিয়ে কাজ চলছে। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে মাঠে নামারও সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে কিছু কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে বিএনপি। এখন জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে সারাদেশে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। যা এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে ‘প্রাথমিক ধাপ’।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, জনগণের আজকে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। গ্রামগঞ্জে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। একই দ্রব্য আবার শহরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সর্বত্র একটা অব্যবস্থাপনা চলছে। সাধারণ মধ্যবিত্তের অবস্থা আরো করুণ। সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বাজারে যেতে পারছে না। জনগণ প্রতিবাদমুখর না হলে সর্বস্তরের মানুষের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তা আরো বাড়বে। সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতেই লিফলেট বিতরণ করছে বিএনপি।

জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় নয়া শতাব্দীকে বলেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার বলেন কোনোটাই নেই। দেশে কোনো ধর্মের মানুষ আজ নিরাপদ নেই। এই অবস্থায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি জনগণের পক্ষে কথা বলবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। আমরা সেই কাজেই আছি।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার নিজেদের লোকজনের পকেট ভারী, ব্যবসা বৃদ্ধি, বাড়তি মুনাফার জন্য কেরোসিন, ডিজেল, এলপি গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এসবের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আগে থেকে হিমশিম অবস্থায় ছিল। সাধারণ মানুষের ওপর এ নির্যাতন আরও বাড়িয়ে দেয়া হলো। বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, জনগণের দল। তাই সরকারের এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচি চলছে। আরো কর্মসূচি দেয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ