ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঢাবিতে হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি ছাত্রদলের

প্রকাশনার সময়: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৫৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে মোবাইল চোর সন্দেহে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এই আহ্বান জানানো।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, ঢাবি শাখা সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ আরও অনেকে।

লিখিত বক্তব্য পাঠকালে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে আটকে রেখে তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে একাধিকবার মারধরের কারণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখেছি, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি মারধর করেছেন ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগ করা উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদসহ একদল শিক্ষার্থী। নির্যাতন করা শিক্ষার্থীদের সবাই ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থী।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে কয়েক ঘণ্টা ধরে মারধর করে একজনকে হত্যা করার ঘটনাকে আমরা হল প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করছি। ছাত্রলীগের পদধারী কতিপয় সন্ত্রাসী বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থী নামে হলগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ‘মব’ তৈরি করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী নামে সক্রিয় এই মবকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।

এ ছাড়া তিনি বলেন, অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির তীব্র নিন্দ্য ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্টবিরোধী সংগ্রাম, ছাত্র জনতার গণআন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এদেশ থেকে সকল অন্যায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দুরীভূত করা। একজন ব্যক্তি অপরাধী হলেও তাকে কোনোভাবেই হত্যার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু জনতার বিজয়ের পর থেকে কিছু অতিউৎসাহীর কারণে গণমানুষের এই আকাঙ্ক্ষাটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, একইসাথে গতকালের এই দুটি ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসের মূল সমস্যা নয়। গত কয়েক বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থার মাঝে তৈরি হওয়া সিস্টেমই এখানে খুনি মানসিকতা তৈরি করছে। তাই গোটা ব্যবস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন। কোনো কিছু ওপরে ফেলা সমাধান নয়। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্র জনতার আন্দোলনেও নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল, আন্দোলনে অকাতরে নিজেদের জীবন দিয়েছে। সেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের আলোচনাটি হঠাৎ সামনে আনা একটি ভুল পদক্ষেপ।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি আরও বলেন, পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের হলে অবস্থান এবং নানা মোড়কে হল ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাও অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানার ব্যবহার করে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অশুভ উদ্বোধন ঘটানো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে। এই গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের লাঠিয়াল বাহিনী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের উত্তরাধিকার বহন করা এই কথিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোশ খসে পড়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থী নামধারী এই মহলটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট ও অন্ধকার শক্তির গোপন তাঁবেদার। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে এদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ না।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ