ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আসছে নতুন বার্তা

প্রকাশনার সময়: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩২

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামীকাল রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বিএনপি। অন্যদিকে একই দিনে দেশের সকল সাংগঠনিক বিভাগগুলোতেও র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশজুড়ে একযোগে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। এই কর্মসূচি সফল করতে সাংগঠনিকভাবে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সমাবেশ থেকে দেশ গঠনে নতুন বার্তা দেবেন। এদিকে আজ শনিবার গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্মরণ সভার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

গত বুধবার পল্টনে এক যৌথ সভায় আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। যৌথসভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। যৌথসভায় বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামীকাল রোববার ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। ওই সমাবেশে ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। সেজন্য প্রস্তুতিও শুরু করছে দলটি। এছাড়া আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেল সাড়ে ৩টায় স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার যৌথসভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ওইদিন বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এই সমাবেশটি হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার সমাবেশ। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে আরো ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমরা এই সমাবেশটি গুরুত্বের সঙ্গে করতে চাই। একইদিন ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের মহানগরে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিগত দিনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবার, যারা পঙ্গু হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, আবৃত্তি, কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামীকাল রোববার আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ঢাকায় সমাবেশ ও শোভাযাত্রা এবং আজ শনিবার গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশকে গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। এ কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরু না হওয়া এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ (রূপরেখা) না আসার বিষয়েও আলোচনা হয়। এ ছাড়া প্রশাসনের উচ্চপদে রদবদলে কোনো-কোনো উপদেষ্টার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আর সরকারের গত এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও তেমন আগ্রহ নেই। তা ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত সাড়ে ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান যেভাবে ধ্বংস করেছে, তা পুনর্গঠনে যেভাবে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন, সেভাবে হয়নি। উলটো ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কারে কাজ বেশি হচ্ছে। এসব বিষয়গুলো প্রধান দল হিসেবে বিএনপি সমাবেশের মাধ্যমে দেশের জনগণকে জানিয়ে দিতে চায়। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের আগামী দিনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেবেন। এছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন। সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে শিগগিরই কর্মসূচির ঘোষণাও আসতে পারে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রধানত চারটি ইস্যুতে এখন সর্বাধিক মনোযোগ বিএনপির। এগুলো হচ্ছে- আন্দোলনে হতাহতদের খোঁজ নেয়া এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ব্যাপকভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ; জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি; নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা ও দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রোববার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পরপর দুই দিন যৌথ সভা করেছে বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে প্রতিটি সংগঠনকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমাবেশ সফলে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি সংগঠন যৌথ সভা করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যৌথ সভা করেছে। সমাবেশে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর নেতাকর্মী ও পেশাজীবীরাও অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে যৌথসভা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলন, আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ১৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির সমাবেশ থেকে দেশ গঠনে নতুন বার্তা দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ডা. জাহিদ বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর নেতাকর্মীরা নিজেদের ভবিষ্যতের আখের গোছানোর জন্য দেশের সম্পত্তিকে পৈত্রিক সম্পত্তির মতো করে লুটপাট করেছে। ১৪ সালে বিনাভোটে নির্বাচন করেছে, ১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করেছে, ২৪ সালে ডামি নির্বাচন করে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে নিজের ক্ষমতাকে বাঁচিয়ে রাখতে সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কাজ করছে আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চাই। আমরা এই চাই অতি দ্রুত যেন এই সরকার সংস্কারগুলো করবে এবং গণতন্ত্রের জন্য জনগণের প্রতিনিধিদের যে শাসন, জনগণের নির্বাচিত সংসদ দিয়ে দেশ পরিচালনা, সে বিষয় যেন দ্রুততার সঙ্গে হয়, সেটি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামী রোববার নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এই দিবসটি উপলক্ষে প্রতিটি বিভাগীয় শহরেই র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। শুধু ঢাকাতেই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই সমাবেশের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর যেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, রোববার পল্টনে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করার জন্য মহানগরের প্রতিটি থানা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। এই কর্মসূচি সফল করতে মহানগরের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ