দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস চললেও এর মধ্যে দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি দেখাতে পারেনি বিএনপি। দলটি এখনই চাইছে না, রাজপথের আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তারপরই মাঠে নামতে চান তারা। এ জন্য নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ আয়োজনের নাম হবে ‘আরাফাত রহমান কোকো
স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’। যার স্লোগান হবে—‘ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই বল, মাদককে না বলুন’। আগামী ৭ জুন বগুড়ায় টুর্নামেন্ট উদ্বোধনের দিনে অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী বিভাগের খেলা। ধারাবাহিকভাবে বাকি বিভাগগুলোর খেলা শেষে আগামী ১২ আগস্ট রাজধানী ঢাকায় ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। মূলত আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দলের প্রধান হাতিয়ার তরুণ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতেই এই পথে হাঁটছে বিএনপি।
জানা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর নামে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে ২৩ সদস্যের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ফুটবলার মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীরবিক্রম), প্রধান উপদেষ্টা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এ ছাড়াও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলকে কমিটির আহ্বায়ক এবং ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হককে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
জানা যায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আরাফাত রহমান কোকো ২০০২-০৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং গেমস ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ক্রীড়া সংঘ ওল্ড ডিওএইচএসের চেয়ারম্যান ছিলেন। যুক্ত ছিলেন সিটি ক্লাবের সঙ্গেও। শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম মিরপুর ও বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম গড়ার পেছনেও তার ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকে। ২০১৪ সালে তার মৃত্যুর পর এবার তার স্মরণে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে বিএনপি।
টুর্নামেন্ট সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যেক বিভাগে দুটি করে দল প্রীতি ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে পৃথক দুটি টিম গঠন করা হবে। প্রতি বিভাগের সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে খেলোয়াড় বাছাই করে লাল দল এবং সবুজ দল নামে দুটি করে টিম গঠন করা হবে। এরপর বিভাগ পর্যায়ে খেলা শুরু হবে। আগামী ৭ জুন রাজশাহী বিভাগের খেলা দিয়ে বগুড়ায় টুর্নামেন্ট উদ্বোধন হবে। বিভাগ পর্যায়ে বিজয়ী দল আগামী ১২ আগস্ট ঢাকায় ফাইনাল রাউন্ডে অংশ নেবে। ২৯ জুন রংপুর বিভাগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নিষ্ক্রিয় ও হতাশ নেতাকর্মীদের আগের অবস্থানে নিতে নানা পরিকল্পনা চলছে। আন্দোলনের উপযোগী করতে আপাতত জনমত তৈরির কর্মসূচির বিষয়ে ভাবছে বিএনপি। এ জন্য দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে মাঠে নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ১৯ মে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে দলের চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দল অংশ নেয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সূত্র মতে, আন্দোলনে যেতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। এ জন্য তাদের চাঙ্গা করতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে দলের চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দলকে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা বিভিন্ন জেলা ও মহানগর এমনকি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সফর করে নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেবেন।
জানা গেছে, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় ছাত্রদল চলতি মাসে সিরাজগঞ্জ জেলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা জেলা, ফরিদপুর মহানগর ও জেলা, রাজবাড়ী জেলা এবং মাদারীপুর জেলায় কর্মী সম্মেলন করেছে। এসব সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দু’টি টিম পৃথকভাবে গত ১৭ মে থেকে কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহীতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম সফর করেছে। টুর্নামেন্টের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে।
যা ৭ জুন থেকে শুরু হয়ে ১২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ক্রীড়াঙ্গন রাজনীতিমুক্ত ছিল। তখন আওয়ামী লীগ বিএনপি সবাই কাজ করার সুযোগ পেত। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার গত ১৫ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে সেই পরিবেশ নেই। আমরা এমন একটি পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই যারা ক্রীড়াপ্রেমী রয়েছেন, তারা যেন ফিরে আসতে পারেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রতিটি বিভাগে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। তারা রাজনৈতিক বিভিন্ন দিকনির্দেশনা নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ