সরকারবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে সক্রিয় হতে চাইছে দলটি। রাজধানীতে পরপর দুটি সমাবেশসহ বেশ কিছু কর্মসূচি সামনে আনা হয়। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের চার মাস পর সরকারবিরোধী কর্মসূচি নির্ধারণে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। এরই অংশ হিসেবে শরিকদের মতামত নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় মাস পর ঢাকার নয়াপল্টনে গত শুক্র ও শনিবার ঢাকায় বেশ বড় আকারের জনসমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছে দলটি। গত বছরের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর আর কোনো সমাবেশ করেনি বিএনপি। তবে দলটির দুটি অঙ্গ সংগঠন পৃথক এই সমাবেশ করে। সমাবেশের পর নেতাকর্মীরা আরও উজ্জীবিত হয়েছে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া রাজপথে সরকারবিরোধী ধারাবাহিক কর্মসূচিতে ফিরতে নানান পরিকল্পনা করছে বিএনপি। কোন ধরনের কর্মসূচি নেয়া যায় এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের ভার্চুয়ালি সভা অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের ভ্যানগার্ড খ্যাত সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলও সারা দেশে জেলায় জেলায় কর্মিসভা শুরু করেছে। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষক দলও। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে যেতে চাইছে বিএনপি। সে জন্য গতকাল রোববার থেকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
বিএনপি নেতারা জানান, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনাদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হয়েছে। নির্বাচনের পর আনুষ্ঠানিক এই সিরিজ বৈঠকে শরিকদের থেকে প্রাপ্ত মতামতগুলো দলের স্থায়ী কমিটিতে পর্যালোচনা শেষে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এর ফলে শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলন মাঠে গড়াবে।
বিএনপি নেতাদের ভাষ্যমতে, রমজান মাসকে আন্দোলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। রমজানে রাজপথের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও ইফতার রাজনীতিতে সরব ছিল দলটি। রাজনীতিবিদদের সম্মানেও ইফতার আয়োজন করে বিএনপি। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বিএনপির ইফতার মাহফিলে জামায়াতের আমিরসহ চার কেন্দ্রীয় নেতা অংশগ্রহণ করেন।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে পর্যালোচনা করেছে বিএনপি। সেই বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতাদের জানান হবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হবে। এছাড়া রাজনৈতিক-পরবর্তী কার্যক্রমগুলোর একটা মূল্যায়ন জানা এবং ভবিষ্যতে আন্দোলনের ইতিবাচক কর্মসূচি কী হতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজপথের কর্মসূচি আশা করছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণে আগামী দিনে কর্মসূচি আসবে বলে মনে করেন তারা। গতকাল রোববার প্রথমে ১২ দলীয় জোট এবং পরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের (এলডিপি) সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠকে হয়েছে। আজ সোমবার জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটাই ‘স্থবির’ হয়ে পড়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলন। বিএনপি নিজেদের মতো করে কর্মসূচি পালন করছে। মিত্র দলগুলোও তাদের মতো করে মাঝেমধ্যে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। নির্বাচনের পর ১৩ জানুয়ারির ছিল লিয়াজোঁ কমিটির সর্বশেষ বৈঠক। এরপর আর কোনো বৈঠক হয়নি। রাজপথে নেই যুগপৎ কর্মসূচি। সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় বেশ কয়েকটি দল একেবারেই নিষ্ক্রিয় ভূমিকায়। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, নেতাকর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে কর্মসূচি পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ জন্য কী ধরনের কর্মসূচি নেয়া যায়, সে বিষয়ে সমমনাদের মতামত নেবে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনেকটা ‘স্থবির’ সরকারবিরোধী আন্দোলন। বিএনপি নিজস্ব কর্মসূচি পালন করছে। মিত্র দলগুলোও নিজেদের মতো করে মাঝেমধ্যে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনাদের সঙ্গে বৈঠকের মতামতের ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ঘ নেতারা এমন বক্তব্য দিলেও বিএনপি নেতারা মনে করেন তারা আন্দোলনে সফল হয়েছে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি তারাও সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গতকাল রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও যুগপতের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হয়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত আমাদের যোগাযোগ রয়েছে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী আন্দোলন ও ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নেতাদের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে। আগামীদিনে আন্দোলনের ইতিবাচক কর্মসূচি কী হতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া শরিকদের পক্ষ থেকেও কিছু প্রস্তাবনা থাকতে পারে, আমাদের কাছে তাদের কিছু জিজ্ঞাসা থাকতে পারে। বৈঠকে যে আলোচনা বা মতামত আসবে এসব বিষয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে মতামতের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপির লিয়োজোঁ কমিটির সঙ্গে সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি আমাদের আলোচনা হয়েছে। বিগত আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে বসার কথা ছিল। এর পর তারা তাদের মতো করে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন। এখন আবার তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দ্রুতই আবার বসা হবে। বিগত আন্দোলনের বিষয়ে তারা যেই পর্যালোচনা করেছে সেটা আমাদের জানাবেন। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এছাড়া পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজপথের কর্মসূচি আশা করছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণে আগামী দিনে কর্মসূচি আসবে বলে মনে করেন তিনি। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, যুগপৎ আন্দোলন সফল হয়েছে এটা বলা যাবে না। বিএনপির প্রতি আমাদের পরামর্শ ছিল একই মঞ্চে বা একই ব্যানারে আন্দোলনের করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি। আজ সোমবার বিকালে লেবার পার্টির সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সরকারবিরোধী সব দল মিলে একসঙ্গে আন্দোলন করার বিষয়ে পরামর্শ থাকবে। এছাড়া সারা দেশে প্রতিটি থানায় থানায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন নিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে মতামত থাকবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ