ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপির সিরিজ বৈঠকে তৃণমূলের মতামতে গুরুত্ব

প্রকাশনার সময়: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:২৩

ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিতে আবারো তিন দিনব্যাপী সিরিজ বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। সবার মতামতের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন ও আন্দোলনে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির হাইকমান্ড। এরই মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা তাদের মতামত দিয়েছেন। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী দিনের কর্মপন্থা এখনই চূড়ান্ত করতে তৃণমূলের সঙ্গে ফের এই সিরিজ বৈঠক। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি, নির্বাচনে ‘জোট রাজনীতি’ এবং বিএনপির গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার দাবি আদায়ে আন্দোলন। এই পাঁচ ইস্যুকে সামনে রেখে এবার তৃণমূল ও জেলা পর্যায়ে মতামত নেয়া হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে বৈঠক থেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের কৌশল ও নীতি চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, মোটাদাগে এই পাঁচ দাবি আদায়ে আন্দোলনে যেতে এবার তৃণমূলের মতামত নেয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠকে আরো ৮ থেকে ১০টি বিষয়ও উঠে এসেছে। সেগুলো হলো দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, হামলা-নির্যাতন বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বেশ কিছু দাবি। ফলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আগেই মাঠের রাজনীতিতে দলীয় অবস্থান শক্ত করতে চায় বিএনপি। পাশাপাশি এবার আন্দোলন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে করার পরিকল্পনা রয়েছে। কোনো কারণে খালেদা জিয়া অসুস্থ হলে বা সরকার খালেদা জিয়াকে আবারো কারাবন্দি করলে সে ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনে মাঠে থাকবে দলটি। সাম্প্রতিক দলের বৈঠকে বিএনপির সব নেতাই চান নিজেদের শক্তির ওপর আস্থা রাখতে।

নয়া শতাব্দীর সঙ্গে বৈঠকে ভাবনার বিষয়ে জানতে চেয়ে কথা হয় কয়েকজন তৃণমূলের নেতার সঙ্গে। তারা জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এমনিতেই হতাশার শেষ নেই নেতাকর্মীদের মধ্যে, এর ওপর আবার হাইকমান্ড কোনো জুৎসই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত অটল থাকতে পারেনি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন দেশের রাজনৈতিক কর্মকা- অনেকটাই স্থবির ছিল। এতদিন পর তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের বৈঠকে দলের মধ্যে অনেকটাই প্রাণের সঞ্চার ফিরবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের যে একটা গ্যাপ রয়েছে সেটা পূরণ হবে। ফলে ভবিষ্যৎ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীরা আরো বেশি সক্রিয় থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতারা। এছাড়া আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো ভোটে না যাওয়ার পক্ষে সবাই। দলের নীতিনির্ধারকদের সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের দাবিতে দেশের বিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জোটগত এবং যুগপৎ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আন্দোলনে নামার আগে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে ঢেলে সাজানোরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিরিজ বৈঠকে দলের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, কোনো কারণে আন্দোলন-সংগ্রামে না থাকতে পারলে পদ ছেড়ে দিতে হবে। কেউই পদ ধরে রাখতে পারবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্বাহী কমিটির সব নেতাই বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে নামার আগে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সবাই বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে দলের কৌশল কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন, এবারের সিরিজ বৈঠকে শীর্ষ নেতারা তা জানার চেষ্টা করবেন। বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী দলগুলোকে একই ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে এবারো বিএনপি কাজ করবে। যারা আসতে চাইবে না, তারা যেন যুগপৎ বা নিজ নিজ আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকে, সে ব্যাপারেও বিএনপির পক্ষ থেকে দলগুলোর সঙ্গে থাকা হবে। তবে যারাই সরকারবিরোধী আন্দোলন করুক না কেন, বিএনপি সবার সামনে থাকতে চায়, পথ দেখাতে চায়। সেই সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি একটি রূপরেখা প্রণয়ন করছে। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পদ্ধতির একটি ফর্মুলাও দেবে বিএনপি। দলটি মনে করে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আওয়ামী লীগ রাজি না হলেও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য থেকেই একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার পদ্ধতি বের করা সম্ভব। সেই দাবি নিয়ে নিয়েই মাঠে থাকবে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, আমাদের দাবি একটাই, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো ভোট হবে না। তাকে অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিতে হবে। দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় আসার সুযোগ আর দেয়া হবে না। আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ের জন্য আন্দোলনে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে পরপর দুটি সংসদ নির্বাচন, সব সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন, তাদের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদসহ কোনো নির্বাচনেই যাওয়া ঠিক হবে না।

দ্বিতীয় দফায় বৈঠকের প্রথম দিন : কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে ৩ দিনের বৈঠকের পর দ্বিতীয় দফায় বিভাগীয় পর্যায়ের সদস্য, জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক শুরু হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপিতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মূল মঞ্চে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির সদস্যরা হলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন ঢাকা ও ফরিদপুর বিভাগীয় পর্যায়ের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। উপস্থিত রয়েছেন‑ ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, লুৎফুল মতিন, খন্দকার আহসান হাবিব, সাইদ সোহরাব, খোন্দকার আবদুল হামিদ, বাবুল আহমেদ, রহিমা শিকদার, বজলুল বাসিত, রাজিয়া আলিম, মোহাম্মদ আলী, তমিজ উদ্দিনসহ অনেকে। আমন্ত্রিত তৃণমূলের ১২৬ জনের মধ্যে বেশিরভাগ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। জানা গেছে, আজ বুধবার বৈঠক হবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা সভাপতিদের সঙ্গে। এদিন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ১২৯ জনকে। শেষ দিন বৃহস্পতিবার খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা সভাপতি মিলে ১০৮ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ