ক্ষমতাসীন সরকার ভিন্নভাবে একদলীয় শাসন চালু করেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে। এক কথায় দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের আবারও প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শর্টকাট পদ্ধতিতে কিছু হয় না।
শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিগত আন্দোলনে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এই ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ইফতারের আগে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার ৬৪ জন নেতাকর্মীর পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি ভয়ঙ্কর দানবের আক্রমণ চলছে আমাদের ওপর। ঢাকা মহানগর বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কারাবন্দি অবস্থায়। তারপরও আমাদের আন্দোলন চলছে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আজকে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য নষ্ট করা হয়েছে। ভোটাধিকার ও কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জনমত ছাড়াই একটি সরকার ক্ষমতায় আছে; যারা জাতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।
তিনি বলেন, আমাদের অসংখ্য ছেলেদের পঙ্গু করা হয়েছে। বিনা কারণে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী ও মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ২৮ ও ২৯ অক্টোবর ঘিরে ২ দিনে বিএনপির ৩৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দেশের মানুষ ঠিক মতো বাজার করতে পারে না। তবুও কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ নন। তারা সঠিকভাবে কর্মসূচি ও দিকনির্দেশনা চান। তাহলে আবারও অতীতের মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন আমরা এই পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর কাছে নাজাত কামনা করি। গুনাহ যেন মাফ করে দেন। তিনি যেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে বেঁচে থাকার তৌফিক দেন। এই দানব সরকার থেকে যেন মুক্তি দেন। এই আন্দোলন হলো জাতির মুক্তির আন্দোলন। এই দখলদার সরকারকে সরিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে আমরা সফল হবো ইনশাআল্লাহ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা মহানগর হলো আন্দোলন সংগ্রামের জন্য। আমি আহ্বান জানাবো আসুন আপনার ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির সংগঠনকে আরও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলুন। যাতে বিএনপির জন্য দুর্ভেদ্য হিসেবে শক্তিশালী হয়। এই দুর্গ যেন কেউ ভাঙতে না পারে। সেইভাবে গড়ে তুলতে হবে। এখন সংগঠনের প্রতি সবচেয়ে বেশি মনোনিবেশন করতে হবে। শর্টকাট পদ্ধতিতে কখনও কিছু হয় না। আজকে ফেরাউন, নমরুদ, হিটলারের মতো কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো যখনই এসেছে তখনই তারা ভেবেছে চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু আসুন আমরা সকলে শপথ গ্রহণ করি যেন আমরা সবখানেই তাদেরকে পরাজিত করতে পারি।
অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রাজনীতিবিদদের জন্য জেলখানা সেকেন্ড হোম। আজকে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা জানেন না তারা জীবিত নাকি মৃত। যার কারণে পারিবারিক সমস্যা আরো প্রকট হয়ে ওঠছে। আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব চাই। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কারো সাথে আপোস করে না। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় না। সেই আপোসহীন নেত্রী যখন বন্দী, তখন গণতন্ত্রও বন্দী। আজকে অন্যায় না করে জেলে যেতে হয়, খুন হতে হয়। সিপাহীদের হাতে মার খেতে হয়।
মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবেদিন, মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, গুম হওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাদাত চৌধুরী ইমন, নিহত পারভেজ হোসেনের মেয়ে রিমি, সাজেদুল হক সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি এবং আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রাইসা বক্তব্য দেন।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ