ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফের মাঠে নামতে চায় বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৬

সরকার পতনে বিএনপির একদফার আন্দোলনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত এবং চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে চরম হতাশায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এখন হতাশা কাটিয়ে পুনরায় মাঠে নামার পরিকল্পনা নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে নিয়মিত কর্মসূচিতে যেতে চায় দলটি। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ শনিবার মহানগরসহ দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

আসন্ন রমজান মাস ঘিরে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিগত আন্দোলন ঘিরে ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাওয়া দল এবং সারা দেশের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা ও উজ্জীবিত করতে পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে বিস্তর আলোচনা হয় এবং নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে স্বাভাবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। আজ শনিবার ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হবে।

গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জানা গেছে, গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সারা দেশের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা ও উজ্জীবিত রাখার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। তবে কর্মসূচির বিষয়ে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে এ নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে আন্দোলন ব্যর্থতায় সারা দেশে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠন ও ‘হতাশাগ্রস্ত’ নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত করতে আসন্ন রমজানে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ইফতার মাহফিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাংগঠনিক জেলাগুলোর ইফতারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। দলের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা এখন জেলা নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়টি সমন্বয় করছেন। এবার কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ পরিসরে চার থেকে পাঁচটি ইফতার মাহফিল করবে বিএনপি।

এরই মধ্যে দুটি ইফতারের শিডিউল চূড়ান্ত হয়েছে। প্রথম রমজানে এতিম ও আলেম-ওলামাদের সম্মানে ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে এবং ২৮ মার্চ রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে একই স্থানে ইফতার মাহফিল হবে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের পর কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পাললের সিদ্ধান্তে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। জাতীয় ইস্যুতে কর্মসূচিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ব্যাপক রদবদলের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় আগের কমিটি বিলুপ্ত করে আনা হয়েছে নতুন নেতৃত্ব। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলসহ সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এসব সংগঠনে আগামীতে কাদের নেতৃত্বে আনা যায় এবং কমিটির বর্তমান শীর্ষ নেতাদের কোথায় পদায়ন করা হবে— সেগুলো নিয়ে এখন দলের ভেতরে কাজ চলছে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে রাজপথে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি। ইতোমধ্যে একদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি জনস্বার্থ ইস্যু নিয়েও কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থকবে বলে জানা গেছে। তবে রমজানে কী ধরনের কর্মসূচি করা যায়— তা নিয়ে দলটির মধ্যে আলোচনা চলছে।

এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যায় এ বিষয়টি নিয়েও ভাবছে দলটি। ভর্তুকি সমন্বয়ের কারণ দেখিয়ে এক বছরের মাথায় গ্রাহক পর্যায়ে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নতুন দর কার্যকর হবে। অর্থাৎ মার্চ মাসে যে বিল পরিশোধ করতে হবে, তা নতুন দামে। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন দর অনুসারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে বাড়ছে ৭০ পয়সা। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে এ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতি বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন বা বিক্ষোভ সমাবেশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কর্মসূচি আসন্ন রমজান মাসজুড়ে করার প্রস্তাব করেছেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, বাংলাদেশ মহান যে আদর্শ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ মৃত। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে রাজপথে নেমেছি, রাজপথে থাকব।

গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন। মঈন খান বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, নারী অধিকার, শিশু অধিকার এবং তাদের সমঅর্থনীতির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

২০২২ সালের আগস্ট থেকে সরকারবিরোধী টানা আন্দোলন করেছে বিএনপি। শুরুতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, বিভাগীয় সমাবেশ এরপর রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের দুই মাসে কখনো হরতাল, কখনো অবরোধ। এরপর আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত’ ধাপে এসে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর ‘চূড়ান্ত’ ধাপের আন্দোলনে আর উত্তাপ ছড়াতে পারেনি দলটি।

গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় রাজপথে দেখা মেলেনি শীর্ষ নেতাদের। দ্বাদশ নির্বাচনের পর আগের মতো রাজপথে নেই হরতাল-অবরোধ। নেই আগের মতো ধর-পাকড়। গ্রেপ্তার আতঙ্কও অনেকটা কেটে গেছে। এরপরও ব্যর্থ আন্দোলনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আরেকটু সময় নিয়ে ফের রাজপথের কঠোর আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। এর আগে নেতাকর্মীদের মুক্ত, সংগঠন পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হতে চায় দলটি। বিএনপি সিনিয়র এক নেতা জানান, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ‘একদফা’ আন্দোলনে হাল ছাড়ছে না বিএনপি। আশাবাদী দলের হাইকমান্ড আবারও নতুন উদ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে, নেতাকর্মীদের আবারও সংগঠিত করে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছেন।

সবকিছু ঠিক করে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আন্দোলনের পরবর্তী ধাপেও আন্তর্জাতিক বিশ্ব আর দেশের জনগণের সমর্থন অব্যাহত রাখার কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদেরও চাঙা রাখতে কাজ করছেন দলের নেতারা। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে কর্মসূচির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া দলের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হবে তার পর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আসন্ন রমজান মাসে আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। বিভিন্ন জেলা, উপজেলার নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হবে। এখনো আমাদের অনেক নেতা কারাগারে আটক রয়েছে তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। হাইকোর্টে যেসব নেতার জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে তারাও জামিন পাচ্ছে না। এখনো অনেক জেলার নেতারা স্বাভাবিকভাবে বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি।

নেতাকর্মীদের জামিন না হলে কাদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করব। নেতাকর্মীদের জামিনের পাশাপাশি চালিয়ে যাব। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করেছি মানুষ যাতে ভোট কেন্দ্রে না যায়, ভোট প্রয়োগ না করে।

প্রাথমিকভাবে আমরা এতে সফল হয়েছি। যেভাবে ২৮ অক্টোবর দমন পীড়ন করা হয়েছে এতেই প্রামাণিত হয় জনগণের প্রতি এ সরকারের কোনো আস্থা নেই। আমাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন চলছে যতদিন পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ