১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, গুম, খুন ও ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা জবরদখলকারী আওয়ামী লীগ সরকার আরও বেশি মাত্রায় দুর্নীতি করার লক্ষ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
তারা বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে সরকারি দলের লোকজন বিত্ত-বৈভবের মালিক হচ্ছেন। তাদের লুটেরা সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। আর সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে আওয়ামী লীগ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। একইসঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
পাশাপাশি বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের বর্ধিতমূল্য প্রত্যাহার এবং প্রতিবেশী দেশের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান ১২ দলের শীর্ষ নেতারা। এসময় বিদ্যুৎ ও নিত্যপণ্যের দাম না কমালে আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
রোববার (৩ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে পলওয়েল মার্কেট, পল্টন চায়না টাউন শপিং সেন্টার, জোনাকি সুপার মার্কেট, স্কাউট মার্কেট ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন ও আগ্রাসন প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ান’ শীর্ষক লিফলেট বিতরণকালে জোটের শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন।
এসময় তারা মার্কেটের দোকানদার, পথচারী ও সাধারণ মানুষের হাতে লিফলেট তুলে দেন।
লিফলেটে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে ভোট চুরির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে আসছে। তারা লুটপাট করতেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়েছে। এই সিন্ডিকেট সরকারকে না বলুন। একইসঙ্গে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে প্রতিবেশী দেশের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানানো হয়।
এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নেতারা বলেন, গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে এক অদ্ভুত নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। ভারতের মতো একটি আগ্রাসনবাদী শক্তি এই সরকারের মদদ যোগাচ্ছে। এ কারণে আমাদের সামনের দিনের আন্দোলনে আরও সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে বিবেচনায় নিতে হবে। বস্তুতপক্ষে আওয়ামী লীগ সীমান্তের ওপার থেকে নিয়ন্ত্রিত।
তারা বলেন, আন্তর্জাতিক টানাপোড়নের মধ্যে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় যে খেলা শুরু হয়েছে, তার মধ্যে এতো সহজে এই খেলায় কারো ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে- তা আমরা বিশ্বাস করি না। এ কারণে আমাদের একটা দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
নেতারা আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসনে বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্প, চিনি শিল্প, চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের উপক্রম। আমি সবাইকে আহ্বান জানাবো, তাদের পণ্য বর্জনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি করুন।
জোটের শীর্ষ নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, প্রতিবেশী দেশ আমাদের প্রিয় দেশে গণতন্ত্র বিহীন সরকার ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আমরা রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতা অন্য কারো হাতে তুলে দিতে পারিনা। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমরা সবাই রুখে দাঁড়াবো। তাদের পণ্য কিনবো না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ।
জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত আমাদের বাংলাদেশকে করদরাজ্যে পরিণত করেছে। সিকিম বানানোর চক্রান্ত চলছে। সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক দিয়েছে। তারা কখনও বাংলাদেশকে সিকিম হতে দেবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাইকে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আগ্রাসন প্রতিরোধ করবো। আমাদের আন্দোলন চলছে এবং অব্যাহত থাকবে।
লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নোয়াব আলী আব্বাস খান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবু হানিফ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ, জামিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেন, ইসলামী ঐক্য জোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা শওকত আমিন, লেবার পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শরিফুল ইসলামসহ জোট নেতারা।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ