ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘ভাইয়া গ্রুপ’র বলয়ে ছাত্রদল!

প্রকাশনার সময়: ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:২১

সরকার পতন আন্দোলনে বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্রদল কার্যত কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে নতুন নেতৃত্বে সক্রিয়দের আনা হয়েছে। আগের কমিটিতে সিন্ডিকেট আর আঞ্চলিকতার কারণে আন্দোলনে সফলতা আসেনি—এমন অভিযোগ থাকলেও তা থকে বেরোতে পারেনি বর্তমান কমিটিও। ‘ভাইয়া গ্রুপে’র লোক দিয়েই গঠন করা হয়েছে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বাধীন বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাত সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। নবগঠিত এ আংশিক কমিটিতে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি এবং নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মোহা. জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রচার সম্পাদক (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদা) শরিফ প্রধান শুভ।

জানা গেছে, বিএনপির আগের অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রদল অগ্রভাগে থেকে ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবরের পর হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে সফলতা দেখাতে পারেনি সংগঠনটি। শীর্ষ নেতারা মাঠে না থাকলেও বিচ্ছিন্নভাবে কর্মসূচি পালন করে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছে কয়েকটি গ্রুপ। আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক নামে মাত্র কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের পর কোনো কর্মসূচিতে দেখা মেলেনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের। নির্বাচনের পর আন্দোলনে আশানুরূপ ফল না আসার কারণ চিহ্নিত করে বিএনপির হাইকমান্ড। তাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে (শ্রাবণ-জুয়েল) কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হলো।

সূত্র জানায়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শক্তিমত্তায় ভর করেই বিএনপি বরাবর প্রতিরোধ কর্মসূচি দিয়ে এসেছে। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশের পর থেকে নব্বই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংগঠনটি নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় থেকেছে। আশি ও নব্বই দশকে দেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির ভ্যানগার্ড সংগঠনটি এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ অবস্থার জন্য মূলত দলটির নেতাদের ব্যর্থতাই দায়ী। সংকট উত্তরণ এবং জনগণের স্বার্থে যথাসময়ের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে ছাত্রদল। আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাইকমান্ড থেকে দেয়া হয়নি কোনো বার্তা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ ২৮ অক্টোবরের পর মাঠ পর্যায়ে করণীয় কী ছিল—শীর্ষ নেতাদের কাছে বারবার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। প্রথম সারির নেতারা নিজেদের গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়। এক দফার আন্দোলনে করণীয় নিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীরা যখন হাইকমান্ডের অনুপস্থিতিতে হতাশ তখন বিচ্ছিন্ন কয়েকজনের আন্দোলনে-উচ্ছ্বাসে উদ্দীপনায় তৃণমূলে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। তাই আগামীতে ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে যারা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ছিল তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে তৃণমূল থেকে দাবি ওঠে। অতীতে ছাত্রদলের কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট-আঞ্চলিকতা প্রভাব ছিল বলে অভিযোগ ছিল। যে কারণে ত্যাগী পরীক্ষিত নেতারা সিটকে পড়েন। ফলে বারবার আন্দোলনে ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। এবারো সেই বলয় (ভাইয়ের অনুসারী) থেকে বেরোতে পারেনি বিএনপি। বর্তমান কমিটিও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অনুসারীদের মধ্য থেকেই গঠন করা হয়েছে। রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে বর্তমান কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে। তিনি যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর অনুসারী বলে জানা গেছে। রাকিবুল ইসলাম ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ফজলুল হক মুসলিম হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারী বলে জানা গেছে।

কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া। বিএনপির চলমান আন্দোলনে তিনি তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে না পারলেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নতুন কমিটিতে পদায়ন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শ্যামল মালুমকে। তিনি নরসিংদী (আকরাম-শ্যামল) গ্রুপের অনুসারী বলে জানা গেছে। সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে আমানউল্লাহ আমানকে। তিনি ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীর অনুসারী বলে জানা গেছে। এছাড়া দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মোহা. জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রচার সম্পাদকের পদ পেয়েছেন (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদা) শরিফ প্রধান শুভ। জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে শ্রাবণকে সরিয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে ছাত্রদল থেকে শ্রাবণকে সরানো হলেও নিয়মিত রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল ও পিকেটিং করে নিজের শক্তি জানান দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আংশিক কমিটি গঠন: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ বি এম ইজাজুল কবির রুয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাত সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। এতে গণেশ চন্দ্র রায় সাহসকে সভাপতি এবং নাহিদুজ্জামান শিপনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন শাওন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার শুভ ও সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভুঁইয়া ইমন।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ