ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘যুবলীগ নিয়ে এতো নিউজ করতে হবে কেন?’

প্রকাশনার সময়: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:০৬ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৩৩
পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সোহেল। ছবি- সংগৃহীত

পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের তিন বছর মেয়াদের কমিটি গঠিত হয় ২০২২ সালে। মেয়াদের দুই বছর শেষ হওয়ার পথে, তবুও পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না জেলা কমিটি। এছাড়াও উপজেলাগুলোতে কমিটি না হওয়ায় সাংগঠনিক গতি কমে যাচ্ছে যুবলীগের। থানা, পৌরসভা, ইউনিয়নসহ প্রতিটি ইউনিটে যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম কমে যাচ্ছে দিন দিন।

এসব বিষয়ে জানতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া কেন্দ্রে জমা দেওয়া আছে। আর উপজেলাগুলোর মধ্যে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে সম্মেলন করা হয়েছে।

তবে এতদিন পেরিয়ে গেলেও কমিটি কেনো দেওয়া হচ্ছে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব বিষয়ে ফোনে কথা বলবো না। আর আপনাদের যুবলীগ নিয়ে এতো নিউজ কেন করা লাগবে?

মূলত পটুয়াখালী জেলা যুবলীগ চলছে টালমাটাল অবস্থায়। ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম‌। উপজেলাগুলো চলছে জোড়াতালি দিয়ে পুরাতন কমিটি দিয়ে। আবার বেশকিছু ইউনিট দীর্ঘদিন রয়েছে কমিটি শূন্য। মূল দলের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে দেখা দিচ্ছে নানান অসঙ্গতি। এছাড়াও তিন বছরে গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছার বাইরে চলে না অন্য কোনো নেতাকর্মীর কথা।

বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি কেনো দেয়া হচ্ছে না- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আতিকুজ্জামান নোমান বলেন, এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। এগুলো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানেন, তারা বলতে পারবেন।

২০০৫ সালে পলাশ হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয় পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের সম্মেলন। এরপর টানা ১৭ বছর পর ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর আবারো অনুষ্ঠিত হয় জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ কেন্দ্রীয় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাড. শহিদুল ইসলাম শহীদকে সভাপতি ও সৈয়দ সোহেলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছরের মেয়াদে গঠন করা হয় ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি।

নবাগত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তবে জেলা যুবলীগ কমিটির তিন বছর মেয়াদের দুই বছর শেষ হওয়ার পথে। তবে কাঙ্ক্ষিত সেই কমিটির দেখা পাচ্ছে না পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা।

এছাড়াও জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে ২০২৩ সালে সম্মেলন করা হলেও মিলছে না কমিটির দেখা। বাকি উপজেলাগুলো চলছে একই অবস্থায়।

প্রায় দেড় যুগ সময় পেরিয়ে জেলা যুবলীগের কমিটি হওয়াতে উৎফুল্লতায় মেতেছিলেন জেলা ও উপজেলাগুলোর যুবলীগ নেতাকর্মীরা। তবে তাদের আশার গুড়ে বালি পড়ে গেছে। তাদের প্রত্যাশিত কোনো ফলাফল মিলছে না বর্তমান জেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দিয়ে। আশানুরূপ কাজে ব্যর্থ হয়েছে জেলা যুবলীগ। এমনটা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী।

এসব বিষয়ে জানতে জেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহীদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সামনা সামনি আইসেন তখন কথা হবে।

পটুয়াখালী জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মূল দলের সঙ্গে সমন্বয় না করার নানান অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার। এছাড়াও আগামী পটুয়াখালী পৌর নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র ডাক্তার শফিকুল ইসলামের বিপরীতে নির্বাচনী প্রচারণা করাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে যুবলীগের বিরুদ্ধে।

পটুয়াখালী পৌর নির্বাচনে মেয়র মেয়র প্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বললে, প্রধানমন্ত্রী তাকে স্থানীয়ভাবে পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরে জেলা আওয়ামী লীগের সর্বসম্মতিক্রমে স্থানীয়ভাবে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ডা. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে সমর্থন দেয়। তবে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে বর্তমান পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে অবস্থান নেয় জেলা যুবলীগ। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মহিউদ্দিন আহমেদের পক্ষে প্রচারণায় দেখা যায় জেলা যুবলীগ সভাপতি-সম্পাদককে।

এসব বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যুবলীগ নেতা আফজালের নেতৃত্বে (কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) দলের বিরোধীতা করেছে। সেই পথটা ধরেই ওরা চলছে। মেয়র মহিউদ্দিনের পরিবারে একজন লোক নাই যিনি আওয়ামী লীগ করে। তার পিতা মুক্তিযুদ্ধের সময় কমলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময়ে তিনি শান্তি কমিটির লোক ছিলেন। পাক বাহিনীকে খাবার সাপ্লাই দিতেন। বর্তমান যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে তাদের একটা ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। আমরাও কিছু বলি না। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করব।

জেলা যুবলীগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রে পাঠানো পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা আমরা যাচাই বাছাই করছি। খুবই শীঘ্রই কমিটি দিয়ে দেওয়া হবে। আর উপজেলার বিষয়টি হলো আমরা ইতোমধ্যে দুটি উপজেলা কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে সম্মেলন করেছি। ওই দুইটার কমিটিও আমরা করে দেবো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ওইটা দেওয়া হয় নাই। খুব শীঘ্রই বাকি উপজেলাগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা কমিটি গঠন করবো।

এছাড়া আসন্ন পৌরনির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা না করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।

নয়াশতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ