মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে রকেট গতিতে: রিজভী

প্রকাশনার সময়: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:২৩ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:২৮

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম রকেট গতিতে বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়া পল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, তারা বিতর্ক সৃষ্টি করে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে বিএনপির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলে। আওয়ামী লুটেরা চক্রের কারণে ডামি সরকার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী বাজার সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে ডামি সরকারের ডামি মন্ত্রীরা। অথচ ডামি প্রধানমন্ত্রী নির্লজ্জভাবে বিএনপির ওপর দায়ভার চাপিয়ে দেওয়ার পর, নেত্রীর অনুসরণে ওবায়দুল কাদের এবং হাছান মাহমুদ সাহেবরা একই সুরে গান গাইছেন।

এসময় তিনি বলেন, সরকারের কাজ অভিযোগ তোলা নয়। বাজার সিন্ডিকেট করে যারা জনজীবনে দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ১ মার্চ থেকে আবারও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জনজীবনকে ভয়াবহ দুর্বিষহ করতেই গণবিরোধী সরকার সর্বনাশা পথে হাঁটছে।

রিজভী বলেন, পবিত্র রমজান মাস সমাগত। সিয়াম-সাধনার এই মাসে দেশের জনগণ একটু স্বন্তি চায়। অথচ প্রতিদিন রকেট গতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে বলেও দাবি করেন তিনি।

‘অনাহার, অর্থকষ্ট আর ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেরে মানুষ পরিবার নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। গতকাল (সোমবার) মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় সায়মা বেগম (৩৫) তার ৯ বছরের মেয়ে ছাইমুনা এবং সাত বছরের ছেলে তাওহীদকে নিয়ে ঋণের জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। এই মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না’।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি খোদ রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে একটি স্বাধীন দেশের ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকষ সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, একটি স্বাধীন দেশের ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকষ সামরিক অফিসারসহ ৭৪ জন নিরপরাধকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের ওপর বর্বর অত্যাচার করা হয়। কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, এমনকি বিশ্বের ইতিহাসেও এই নারকীয় বর্বরতা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এটি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত। এমন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আওয়ামী লীগ দেশ এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে মনুষ্যত্বহীন ছেলেখেলা শুরু করেছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনার ১৫ বছর পর এসে ‘ডামি সরকার’র মন্ত্রীরা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে নাকি বিএনপি জড়িত!

বিস্ময় প্রকাশ করে বিএনপি নেতা বলেন, একটি সরকার কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এ ধরণের অভিযোগ করতে পারে! সব ঘটনা যদি বিএনপিই করে, তাহলে ক্ষমতা দখলকারী শেখ হাসিনা কি করছেন? লুটপাট, দুর্নীতি আর টাকা পাচার করা?

‘২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিএনপি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তারাই ষড়যন্ত্র করে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটায়। চৌকষ অফিসারদের হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পেছনে বিএনপি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ষড়যন্ত্র যে তারাই করেছে, তা স্পষ্ট। সেদিন পিলখানায় কি ঘটেছিল, কারা ঘটিয়েছিল, কেনো ঘটেছিল, ঘটনার নেপথ্যের নায়ক কারা, কারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে-সবকিছুই আওয়ামী ঠুসি পরা হাছান মাহমুদ স্বীকার না করলেও দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সত্য ঘটনা গতকালও প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী, সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখার আওয়ামী ষড়যন্ত্র নতুন নয়। সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রাখতে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্যারালাল রক্ষীবাহিনী তৈরি করা হয়। দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ এবং তাদের দেশি-বিদেশী দোসররা সেনা কর্মকর্তা এবং সেনা সদস্যদের মুখোমুখি করে দিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার ঐকবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ও দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আওয়ামী এবং তাদের দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হয়। তবে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মহল বিশেষের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।

রিজভী বলেন, গতকাল (সোমবার) পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্য পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার নির্মমতাকে প্রশ্রয় দেওয়া। তার বক্তব্য জনমনে অসীম হতাশা ও তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

‘বিএনপি বিদেশিদের কাছে শুধু নালিশ করে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ২০০১ থেকে তারা কি করেছেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশে গিয়েও নালিশ করেছেন তারা। আর আমরা যে নালিশ করেছি, সেটি উনি কি করে জানলেন? উনি কি কোনো গোপন যন্ত্র ব্যবহার করেন নাকি? মনে হয় ওবায়দুল কাদের বিএনপির বিকল্প স্থায়ী কমিটির সদস্য!

‘বিএনপিকে খেসারত দিতে হবে’ এমন মন্তব্যের জবাবে দলটির মুখপাত্র বলেন, খেসারত তো আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। এরশাদের সঙ্গে ভোটে গিয়ে সেটিই প্রমাণ করেছে। তাদের মিথ্যাচারের পরিণাম ভোগ করতে হবে।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড সাহিদা রফিক, তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, মৎস্যজীবি দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, সাবেক নেতা অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।

নয়া শতাব্দী/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ