আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রবর্তন করেছিল। উপজেলা নির্বাচন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার জন্য আইন সংশোধন করেছিল। কিন্তু, সেই অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি।
সম্প্রতি সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার অংশগ্রহণ থেকে উদ্ভূত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের জন্য দলটি বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করেছে।
একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে উপজেলা নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক ব্যবহার করতে না দেয়া, যার লক্ষ্য তৃণমূল নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ অনুভব করেছে যে, সারা দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়ে গেছে। নির্বাচনের পরও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। সারা দেশে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও উপদলীয় কোন্দল সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এ রকম অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সংযত হওয়া এবং নির্বাচনের পরে সব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি, বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু, যদি নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং দলীয় পরিচয় ব্যবহার না করে নির্বাচন হয় তাহলে বহু বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এর ফলে নির্বাচন উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ হবে। সব কিছু বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ কৌশলগত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত সোমবার সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে বসে সংঘর্ষ নিরসনের জন্য। ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা নৌকা প্রতীকের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে চান।
দলীয় মনোনয়ন উপেক্ষা করে কোনো দলের লোক নির্বাচনে অংশ নিলে তা ‘নৌকা’-এর গর্বের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আ’লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, বৈঠকে একাধিক নেতা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে ঢাকায় বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা প্রয়োজন। তবে বর্ধিত সভা না ডেকে সমস্যা সমাধানের জন্য আট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেন আ.লীগ সভাপতি।
এ প্রসঙ্গে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, গত সাধারণ নির্বাচনে দলীয় নেতাদের প্রার্থীদের সমর্থনকে কেন্দ্র করে যে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা সংলাপের মাধ্যমে মোকাবিলা করা উচিত। এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম দ্রুততর করে তৃণমূলের কোন্দল নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে ৩১ মে শেষ হবে।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ