দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া রাজশাহী-২ (সদর) আসনের পরাজিত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরীর কাদিরগঞ্জের শাহ ডাউন কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান কাঁচি প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আসলাম সরকার। বক্তব্য রাখেন, কাঁচি প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল ও রাজশাহী-২ (সদর) নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাড. আসলাম সরকার বলেন, রাজশাহী-২ (সদর) স্বতন্ত্র প্রার্থী (কাঁচি প্রতীক) অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা একজন সাবেক ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং রাজশাহীর একজন অত্যন্ত পরিচিত রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করায় রাজশাহীবাসীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে পরাজিত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচনকে বির্তকিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে লিখিত অভিযোগ করে এবং গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, ‘নির্বাচনের দিনে ভোটারদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়েছে’- যা উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের তার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য রাজশাহীর গণমানুষের নেতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দোষারোপ করেছেন, যা অনাকাঙ্খিত।
লিখিত বক্তব্যে অ্যাড. আসলাম সরকার বলেন, গত ২৫ ডিসেম্বর এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের রাণীবাজারের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সভায় ফজলে হোসেন বাদশার উপস্থিতিতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রকাশ্যে তাকে সমর্থন দেন। সভায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমি নৌকার পক্ষে। আমি ফজলে হোসেন বাদশা ভাইয়ের পক্ষে।’ অথচ রাজশাহীতে ১৪ দলের জোটভুক্ত জাসদের আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় রাজশাহী ১৪ দল ফজলে হোসেন বাদশাকে সমর্থন দিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। জোটের ওয়াকার্স পার্টি ব্যতীত অন্য শরীক দল ফজলে হোসেন বাদশাকে সমর্থন দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষসহ অধিকাংশ নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, এমনকি দলীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী স্বতস্ফূর্তভাবে কাঁচি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত হন। কাঁচি প্রতীকের পক্ষে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ নির্বাচনী প্রচার মিছিলে যার বহিঃপ্রকাশ আপনারা দেখেছেন। ফলতঃ একটি অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ২৪ হাজার ভোটের বিপুল ব্যবধানে ফজলে হোসেন বাদশা পরাজিত হন। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর নিজের বিগত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ড বিচার-বিশ্লেষণ না করে মনগড়া অভিযোগ তুলে তিনি রাজশাহীবাসী ও সম্মানিত ভোটারদের হেয় করেছেন। ফজলে হোসেন বাদশা তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন। আমরা তার এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নগর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী মহানগরীর জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে এবং চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তিনিসহ তার লোকজন যে হীন অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। আমরা আশা করি, তিনি অবিলম্বে তার অসত্য, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মনগড়া বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। আমরা আশা করি, তার শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তিনি দোষারোপের রাজনীতি পরিহার করে জনমুখী রাজনীতির প্রতি মনোযোগী হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, ডা. তবিবুর রহমান শেখ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মুসাব্বিরুল ইসলাম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, আব্দুস সালাম, রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আনসারুল হক খিচ্চু, বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান রতন, বোয়ালিয়া (পূর্ব) থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ, মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন, নগর শ্রমিক লীগ সভাপতি মাহাবুবুল আলম, সাধারণ সম্পাদক আখতার আলী, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আব্দুল মোমিন, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি প্রমুখ।
নয়া শতাব্দী/এনএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ