বিএনপির ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনে মাঠে নেই ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে খ্যাত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিএনপির ‘ভ্যানগার্ড’খ্যাত সংগঠনটি এখন নির্জীব। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। এতে বর্তমান কমিটির ওপর ক্ষুব্ধ ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।
সূত্র জানায়, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল যে সব ইউনিটের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে, বিশেষ করে রাজধানীর মধ্যে যে সব ইউনিট রয়েছে এর মধ্যে সুপার ফাইভ এমনকি প্রথম ২০ জন তাদের দুজনের নিজস্ব লোক। এদিকে শ্রাবণকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে দাবিদার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলও আন্দোলনের মাঠে নেই। একেবারে নিরুদ্দেশ। খুঁজে পাচ্ছেন না সংগঠনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত্ত নেতারাও। এতে করে তৃণমূল ছাত্রদলের বেহাল দশা। অন্যদিকে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়াকে চলমান আন্দোলন কর্মসূচির প্রথম দিকে দুই-একটি মিছিল ও পিকেটিং ছাড়া তাদের আর মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না।
জানা যায়, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের আমলনামায় অভিযোগের পাহাড় জমে আছে। আর তুলনামূলক কম অভিযোগেও সভাপতির পদ হারাতে হয় শ্রাবণকে। গত ৮ আগস্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সরিয়ে রাশেদ ইকবাল খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। তখন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়, শ্রাবণের অসুস্থতার কারণে সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এরপর ১১ অক্টোবর শ্রাবণকে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে নিয়মিত মাঠে রয়েছেন শ্রাবণ। নিজের শক্তি জানান দিতে নিয়মিত রাজপথে থেকে মিছিল ও পিকেটিং করে যাচ্ছেন তিনি।
অতীতে সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রদল। কিন্তু সেই জৌলুস হারিয়ে ফেলতে বসেছে এক সময় আন্দোলন-সংগ্রামে তুখোড় নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনটি। সরকার পতনের ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনের সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে তৃণমূলে নেই কোনো নির্দেশনা। এতে করে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতারা। তৃণমূলের অভিযোগ সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব এই কঠিন মুহূর্তে তাদের পাশে নেই।
ছাত্রদলের বেশ কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে টানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে সংগঠনটির জেলার নেতারা। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলা মামলার শিকার হচ্ছে তারা। এছাড়া যে সব নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছেন তাদের পরিবারের সঙ্গেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোনো রকম যোগাযোগ করা হচ্ছে না। এদিকে যে সব নেতাকর্মী গ্রেপ্তার এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন তাদেরও কোনো খোঁজখবর নেয়া কিংবা নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। এতে করে কেন্দ্রের প্রতি ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব।
জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর থেকে চলমান আন্দোলন সফল করতে মিটিং মিছিল পিকেটিং করতে গিয়ে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এসব নেতাকর্মীর পরিবারকে সান্ত্বনা তো দূরে থাক খোঁজখবরও নেয়নি সংগঠনটি। এছাড়া গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদেরও খোঁজখবর নিচ্ছে না কেউ। যারা কারাগারে আটক রয়েছে তাদের পিসিতেও টাকা পয়সা নেই, কিন্তু খোঁজখবর নিচ্ছে না কেউ।
২৮ অক্টোবর থেকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে টানা হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। চলমান কর্মসূচি তেমন উত্তাপ না থাকলেও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের কয়েকটি গ্রুপ মাঠে থেকে নিয়মিত মিছিল ও পিকেটিং করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি তানজিল হাসানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ; ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি আকতারুজ্জামান আকতার ও নাছির উদ্দিন নাছিরের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ; ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন ও করিম প্রধান রনির নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মারুফ এলাহী রনি ও শ্যামল মালুমের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ মিছিল পিকেটিং করছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ছাত্রদলেরই সাবেক নেতাদের নিয়ে গড়া চক্রের সদস্যরা বর্তমানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তারা নিজেদের লোক দিয়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি দিতে বাধ্য করেছে। এছাড়া সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এসব চক্রের কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে কমিটিতে নাম লেখাতে পারেননি ত্যাগী নেতারা। এতে করে যোগ্য এবং সাহসী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমন অভিযোগ দায়িত্বশীল অনেকের।
অভিযোগ রয়েছে, এর আগে ছাত্রদলের যে সব কমিটি ছিল তারা কেন্দ্রের ব্যানারে বিভিন্ন আন্দোলনে বিক্ষোভ মিছিল বা অন্য কর্মসূচি পালন করেছে।
নয়া শতাব্দী/এমবি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ