ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাটেনি জামায়াত ‘রহস্য’ 

প্রকাশনার সময়: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৪১

সরকার পতনের ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আন্দোলন বেগবান ও নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলনরত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক জায়গায় আনতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এসেও ধোঁয়াশা কাটেনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে।

বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোকে এক জায়গায় আনতে কাজ করছে বিএনপি। এ জন্য সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ও একজন ভাইস চেয়ারম্যানকে ইতোমধ্যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী দিনের আন্দোলন গতিশীল করতে বিভিন্ন দলের মতামতও নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় আলোচনা সম্পূর্ণ হয়েছে; দ্বিতীয় ধাপে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।

সূত্র জানায়, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে নানা কারণে মতবিরোধে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সমপ্রতি পর্দার আড়ালে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সে দূরত্ব কমে এখন একসঙ্গে নির্ধারিত হচ্ছে সরকারবিরোধী এক দফা কর্মসূচি। গত ২৮ অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে এক হয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিক আদর্শে জামায়াতের সঙ্গে ভিন্নতা থাকলেও উদ্দেশ্য এক হওয়ায় বিএনপিও এক সময়ের এ জোট সঙ্গীর ওপর ভরসা রাখছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দিলেও অনুমতি ছাড়াই নির্বিঘ্নে সমাবেশ শেষ করে জামায়াত। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে কিছুটা আলোচনার জন্ম দিলেও এখন তা কেটে গেছে। সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতা কিংবা আঁতাতের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিয়ে জামায়াত বলছে, সরকারের পতনের জন্য তারা একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে।

সরকারবিরোধী আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যে ইসলামি দলগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন অন্যতম। এছাড়া হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ বাকি ইসলামি দলগুলোও আলোচনায় রয়েছে। কারণ ইসলামি দলগুলো বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে নেই। তবে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিগুলো অনুসরণ করছে জামায়াত। দলটি পৃথক হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে থাকছে। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন জাতীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি পালন করছে। এ দাবিতে দলটি নির্বাচন বর্জন করে আলাদা কর্মসূচি করছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন বেগবান ও নির্বাচন প্রতিহত করতে ভোট বর্জনকারী দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় প্ল্যাটফরম গড়তে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোট এবং নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেয়া কয়েকটি দল বা ব্যক্তির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলের কয়েকজন নেতা বলেন, এই প্ল্যাটফর্মের নাম কী হবে বা কবে নাগাদ এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি এখন লক্ষ হচ্ছে ইসলামি দলগুলোকে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে নিয়ে আসা। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনকে চলমান আন্দোলনে পাশে চায় বিএনপি। তাদের সরকার চলমান বিরোধী চলমান আন্দোলনে শক্ত ভূমিকায় আনতে চায়। কিন্তু সেটি কীভাবে, তার কৌশল ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে কর্মসূচি যুগপৎ নাকি এক জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির কৌশল নেয়া হবে, সেটিরও কোনো কর্মপরিকল্পনা হয়নি। আবার দল দুটির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে গেলে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত বামধারার দলগুলো বিষয়টি কীভাবে নেয়, সেটিও চিন্তা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা। জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।

যারা চাপে ও লোভে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বুঝিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হবে। এই সময়ে হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি রাখা হবে না। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশসহ বিকল্প কী কী কর্মসূচি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র নেতা এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, সমাবেশসহ স্বাভাবিক কিছু কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাতে তা বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, এক ব্যানারে আন্দোলনের কথা শোনা যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি। যে সব দল নির্বাচন বর্জন করেছে তাদের নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলন করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এক ব্যানারে আন্দোলন হলে তো ভালোই হয়, তাহলে বৃহত্তর একটি ঐক্যসৃষ্টি হবে; এতে আন্দোলনে গতি পাবে। আশা করছি সামনে এক ব্যানারেই আন্দোলন হবে।

জামায়াতের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নেতারা আলোচনা করছে। এছাড়া বিভিন্ন ইসলামি দলের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। আগামী দিনে আন্দোলন ভিন্ন ব্যানারে নাকি এক ব্যানারে হবে এ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

তবে প্রয়োজনে এক ব্যানারে আন্দোলন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা একই দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এক সঙ্গে আন্দোলন করছি। একই দাবিতে আমরা রাজপথে রয়েছি, সব বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য চাই যাতে সামনে আন্দোলন কার্যকরী হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে হয়তো বিরোধী দলগুলো এক ব্যানারে হয়েও যেতে পারি। এখন মাঠের আন্দোলন কীভাবে আরও বেগবান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, জামায়াতকে নিয়ে একটি ট্যাবু গেইম খেলছে সরকার। বলা হচ্ছে জামায়াত যুদ্ধাপরাধী, এই করেছে সেই করেছে- আসল কথা যারা বলছে প্রকারান্তরে তারা ফ্যাসিবাদের দালালি করছে। ১৯৯৬ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোলাম আযমের পা ছুঁয়ে সালাম করেছিলেন; আজকের আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করেছিল। জামায়াতকে কেন আমরা আন্দোলনের বাইরে রাখব? কেউ ফ্যাসিবাদের দালালি করবেন না। আজকে আন্দোলনে সবাইকে এক ব্যানারে আসতে হবে। সেই প্রচেষ্টা চলছে। ইনশাআল্লাহ এদেশের মানুষ এ ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাবে।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ