ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
দিল্লি সফরে জি এম কাদের

রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল

প্রকাশনার সময়: ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০২
ছবি : সংগৃহীত

আগামী নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে ভারতে সফরে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। অন্যরা হলেন— জি এম কাদেরের সহধর্মিণী ও দলের সংসদ সদস্য শেরীফা কাদের এবং দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা।

আগামী এ সফরে ভারত সরকার ও দেশটির ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে। জাপা চেয়ারম্যানের এই ভারত সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। দিল্লি সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনাও হচ্ছে।

জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তৎপরতা বেড়েছে জাতীয় পার্টির। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলটি। দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান দুপুর আড়াইটায়।

আগামী ২৩ আগস্ট ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদলও ভারত সফর করে এসেছে। শনিবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্যের বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টি কখনও স্বতন্ত্র কোনো অবস্থান নিতে পারবে কিনা এমন প্রশ্ন দলটির ভেতরেই রয়েছে।

তবে বেশ কিছুদিন ধরে জি এম কাদের সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার বক্তব্য অনেক সময় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপির দাবির সঙ্গে একই সুরে মনে হচ্ছে।

অবশ্য বিএনপি আন্দোলনে জাতীয় পার্টি থাকছে না বলে দলটির পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে। এমন পটভূমিতেই জাতীয় নির্বাচনের আগে বিজেপি আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। এ ছাড়া নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশি দূতদের সঙ্গেও তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।

সব দলের অংশগ্রণে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ নির্বাচন আয়োজনে জাতীয় পার্টির অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে আগামী নির্বাচনে দলটির অবস্থান কী হবে এখনো তা স্পষ্ট নয়। যদিও নেতারা বলছেন, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। সামনের পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়েই জাতীয় পার্টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

অবশ্য নেতারা এও বলেছেন, সম্প্রতি জি এম কাদের সরকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রকাশ্যে ভোট চুরি ও সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলেও জানিয়েছেন। তাই পার্টির জিএম কাদের চাপে ফেলতে ও নিবৃত্ত করার চেষ্টা থাকবে এ সফরে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

দলীয় সূত্রমতে, ২২ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাউথ ব্লকের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে ভারত সফরকালে বিজেপির নেতা ও ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ মন্ত্রী পর্যায়ে কাদেরের সাক্ষাৎ হতে পারে। সংসদ নির্বাচনে জাপার অবস্থান, অংশগ্রহণ এবং জোট গঠনসহ রাজনৈতিক ইস্যু এ সফরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। অন্যদিকে, সংবিধানের আলোকে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য বিকল্প কোনো উপায় বের করা যায় কিনা এ নিয়ে জাপায় আলোচনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জি এম কাদের নির্বাচনকালীন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলেও মনে করছেন নেতারা।

এছাড়া কংগ্রেস কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং ভারতে অবস্থানরত সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠক হতে পারে। জাপা নেতারা বলছেন, ভারত সফরের প্রথম এজেন্ডা থাকবে শেখ হাসিনা অধীনে যেন নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। এরপর দেশ যেন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের আখড়া না হয় এবং মৌলবাদের উত্থান বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া জাতীয় পার্টির স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়েও আলোচনা টেবিলে উঠে আসতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে কূটনৈতিক মহলে বিশেষ পরিচিত মাসরুর মাওলা বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সফর যেহেতু নির্বাচনের আগে তাই স্বাভাবিকভাবেই ভোট নিয়ে আলোচনা হবে।

ভূ-রাজনৈতিক ও প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের একটি গুরুত্ব নিশ্চয়ই রয়েছে। সংসদের বিরোধী দল হিসেবে আমাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করবে ভারত। আমরা আশা করব সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছে। তবে কোনো জোটে যাওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো চিন্তা নেই।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ