১২ দিন বিরতির পর ‘সরকার পতন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’- একদফা দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আবারও মাঠে নামছে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার ঢাকার দুই সিটিতে গণমিছিল করবে দলটি। গণমিছিলে বড় শোডাউনের মাধ্যমে আবারও রাজপথের শক্তি জানান দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।
নতুন এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ শক্তিও নিয়োগ করেছেন তারা। এবার কোনো দায়িত্বে অবহেলা কিংবা সমন্বয়নহীনতা নয়; যেকোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে নেতাদের ওপর কঠোর বার্তা রয়েছে হাইকমান্ডের।
চূড়ান্ত আন্দোলনের নেতাকর্মীকে নতুন উদ্যমে চাঙা করতে নেয়া হয়েছে এ কৌশল। একই দিন সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোও পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। এখান থেকেই ঘোষণা আসবে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি।
মূলত ঢাকার প্রবেশমুখে ব্যর্থ কর্মসূচির ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে বিএনপি। এখন থেকে ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’দিন মাঠে থাকার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দলটি। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে।
নিয়মিত প্রস্তুতি সভা ও মতবিনিময় করা হয়েছে। থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হয়েছে। এসব বৈঠকে শুধু গণমিছিল নয়; আগামীতে যে কোনো কর্মসূচিতে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দেয়া হয়েছে কঠোর বার্তা। এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাদের বাধ্যতামূলক হাজিরার বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া দলের কেন্দ্র থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ফলে কোনো কারণ ছাড়া কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলেই পড়তে হবে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায়। হাইকমান্ডের এমন কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও দেয়া হয়েছে কড়া হুঁশিয়ারি। দলের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে আগামীতে প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীর উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
জানা গেছে, আজ শুক্রবার বাদ জুমার পর দুপুর ২টায় বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত গণমিছিল করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। অপরদিকে, একই সময়ে কমলাপুর থেকে মালিবাগ পর্যন্ত গণমিছিল করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। পৃথক এই গণমিছিলে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় নেতাকর্মীর মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে মাঠে নামার পরিকল্পনা নিচ্ছেন। সক্রিয় নেতাদের মধ্যেও শুরু হয়েছে কর্মসূচি সফলে প্রতিযোগিতা। ফলে গণমিছিলে শুধু নেতাকর্মীর উপস্থিতি নয়; সাধারণ মানুষেরও বড় অংশ হাজির হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন মহানগর নেতারা।বিএনপি নেতারা বলছেন, গত ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচি থেকে তারা বেশ কিছু অর্জন করেছেন। এতে যেমন নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বে অবহেলা, কোন্দলের মতো বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে, তেমনি আবার সরকারের কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের বিষয়ও সারাবিশ্বে প্রকাশ পায়। কিন্তু নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নেতারা আগামীতে পথ চলতে চান।
একই রকম ভুল যাতে আগামীতে না হয়, সেদিকে কঠোর নজর দেয়া হচ্ছে। চিহ্নিত করা হয়েছে দায়ী নেতাদের। এর মধ্যে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। বাকিদের বিষয়েও দল পর্যালোচনা করছে। মূলত, আগামী দিনে নতুনভাবে পথচলার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নেতা সঠিক অবস্থানে না থাকলে কর্মীদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। নেতার আদর্শ, উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনে দুঃসাহস না থাকলে সে নেতৃত্ব দিতে পারে না। কঠিন সময়ে নেতার নেতৃত্ব চেনা যায়। যেমন বর্তমানে বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কঠিন সময় আর আসেনি। এখন যারা সাহসিকতার সঙ্গে সামনে থাকবে, তারাই হবে প্রকৃত নেতা; বিএনপির আগামী দিনের কাণ্ডারি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির প্রত্যেক কর্মী এখন নেতৃত্ব দেয়ার মতো উপযোগী। তাদের ত্যাগ, শ্রম আর দলের প্রতি কমিটমেন্টের কারণেই আজ দল এ পর্যন্ত পৌঁছেছে। সুতরাং রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে সংগঠিত করা, সফল করার প্রচেষ্টাই করবেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে। সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আশা করি, এই গণমিছিল কর্মসূচিতে সরকার কোনো প্রকার বাধা সৃষ্টি করবে না। যদি বাধা প্রদান করে তার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর উত্তরের গণমিছিলে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমন্বয় করবেন উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক। অপরদিকে, ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের গণমিছিলে নেতৃত্ব দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সমন্বয় করবেন মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম এবং ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
এ ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এবং নির্বাহী কমিটির সদস্যরা তাদের সুবিধামতো ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ গণমিছিলে অংশ নেবেন।
সমমনা দলগুলোর গণমিছিল : একদফা দাবিতে আজ শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল করবে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটগুলো। রাজধানীর অন্তত ৭ স্পটে থেকে গণমিছিল বের করবে দল ও জোটগুলো। ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে থেকে বিকাল ৪টায়, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আল রাজি কমপ্লেক্স সামনে বিকাল ৩টায়, লিবারেল ডেমোক্রের্টিক পার্টি-এলডিপি কাওরান বাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিকাল ৩টায়, বাংলাদেশ লেবার পার্টি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সকাল সাড়ে ১০টায়, গণফোরাম-পিপলস পার্টি মতিঝিলে নটরডেম কলেজের সামনে থেকে।
গণঅধিকার পরিষদ (ভিপি নুর) পুরানা পল্টন কালভার্ট রোড থেকে বিকাল ৩টায় ও রেজা কিবরিয়া (একাংশ) প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায়, ববি হাজ্জাজ-এনডিএম মালিবাগ মোড় থেকে সন্ধ্যা ৭টায় এবং সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেসক্লাব সকাল সাড়ে ১০ টায় গণমিছিল শুরু করবে। তবে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করবে না গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, শুক্রবার ঢাকার রাজপথের কোনো কর্মসূচি পালন করবে না গণতন্ত্র মঞ্চ। কারণ ওইদিন জোটের বিভিন্ন দলের নিজস্ব প্রোগ্রাম ও সভা রয়েছে। হয়তো আমরা পরবর্তী দুই-তিন দিনের মধ্যে এই কমর্সূচি পালন করব।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ