ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কথার লড়াইয়ে বড় দুই দল

প্রকাশনার সময়: ৩০ আগস্ট ২০২১, ০৮:১৯

আবার উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তুলছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। পাল্টা জবাব দিচ্ছে বিএনপি। বড় দুই দলের চলছে কথার লড়াই। কথা দিয়েই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন উভয় দলের নেতারা। এই লড়াইয়ে নেমেছেন উভয় দলের প্রধান থেকে শুরু করে কর্মীরাও। প্রতিদিনই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ নিয়ে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিএনপি পক্ষে, আওয়ামী লীগ বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছে। চলছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথার মারপ্যাঁচ। রাজনীতির মাঠে কেবল কথার যুদ্ধ নয়, আন্দোলনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।

তবে কথার লড়াই পেরিয়ে এখন মাঠের আন্দোলনে গড়াতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের আক্রমণ পাল্টাআক্রমণে রাজনৈতিক অঙ্গন কিছুটা হলেও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকভাবেই আর মসৃণ থাকছে না। সরকারের জিরো টলারেন্সের কারণে দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক মাঠ আবার উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০২৩ সালের সংসদ নির্বাচন ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন’ ও ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন’ এর দাবি করে বসে আছে। সঙ্গে এখন আবার জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামনে রাজপথে দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে। তাই সংঘাতের আশঙ্কায় জনমনেও কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে, রাজনীতির এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলছেন তারা।

তারা এটাও বলছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু ইস্যু নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এজন্যই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে টার্গেট করে সমালোচনা করছে এবং এমন সব স্পর্শকাতর ইস্যু সামনে আনছে যেন বিএনপির অস্তিত্বে নাড়া দেয়। যে ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল আন্দোলনের উপায় খুঁজছে তার মধ্যে রয়েছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে জিয়ার বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তে রাজপথ গরম হয়েছিল।

সূত্রে জানা যায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে হঠাৎ করেই পরস্পরকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এই চাপে রাখার অংশ হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, দলের চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার মামলা ফের আলোচনায় নিয়ে আসা ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন সমালোচনা করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা রাজনৈতিক অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ সরকার ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যায় রয়েছে’ এমন বিবেচনায় উল্টো চাপ সৃষ্টি করতে আগাম আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা জানান দিচ্ছে বিএনপি। তবে সবকিছুই ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মনে করছেন দুই দলই।

আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলছেন, হঠাৎ করে বিএনপির আন্দোলনের হাঁকডাক নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মনে করছেন তারা। আপাতত বিএনপির আন্দোলনের সাংগঠনিক সক্ষমতা বা রাজনৈতিক সক্ষমতা দুটোই অনুপস্থিত। সেক্ষেত্রে কেবল ‘চাপের কৌশল’ থেকে আর নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে আন্দোলনের কথা প্রচার হচ্ছে। বিএনপির আন্দোলন মানে জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা করা। নতুন করে অশান্তি সৃষ্টি করতে বিএনপি আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে মাঠে দেখা হবে। মাঠে আওয়ামী লীগসহ সবাই রয়েছে, দেশের সাধারণ জনগণও আছে। তাই মাঠের দেখা মাঠেই হবে।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জনগণের দৃষ্টি সরাতে জিয়াউর রহমানের ইস্যুটি সামনে এনেছে। এটি কোনোভাবেই হতে দেয়া হবে না। সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গেই এ ইস্যুতে তারা রাজপথে সবরকম কর্মসূচি ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। গণতান্ত্রিক পন্থায় সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, প্রতিবাদ, মানববন্ধনসহ যত ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি আমরা সেগুলোই করব। গণতন্ত্রকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করলেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি দেয়া হচ্ছে। দলকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীরাও নতুনভাবে চাঙ্গা হচ্ছে। দলের তরুণ নেতৃত্বকে আগামী দিনের প্রস্তুতি নিতেই আন্দোলনের প্রসঙ্গটি সামনে আনছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

তিনি বলেন, আন্দোলনের আগে বিএনপি চাইছে সর্বদলীয় ঐক্য। এই সরকারকে আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাপে ফেলতে সর্বদলীয় আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, বিএনপির আন্দোলনের ডাক শুনলে তাদের দলের নেতাকর্মীরাও হাসে। আওয়ামী লীগ তো আমলেই নেয় না। এমন কোনো ইস্যু নেই যে বিএনপি দেশে আন্দোলন করবে। তিনি মনে করেন, বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি নেই আন্দোলন গড়ে তোলার। ইস্যুবিহীন কোনো আন্দোলন জমে না।

ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির নেতারা তাদের কর্মীদের চাঙ্গা করে তোলার কৌশল হিসেবে মাঝে মধ্যে আন্দোলনের আওয়াজ তোলেন। এর বেশি কিছু নয়। বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণা বহুবার নেতারা দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলন আর রাজপথে গড়ায় না। তাদের আন্দোলনের ডাক আওয়ামী লীগ কী আমলে নেবে, বিএনপির নেতাকর্মীরাও আমলে নেন না। এসব হাঁকডাক দিয়ে মূলত আলোচনায় থাকাই বিএনপির কৌশল। বিএনপির আন্দোলনের আওয়াজে আওয়ামী লীগ কোনো চাপ বোধ করে না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীলরা যেভাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে বক্তব্য দিচ্ছে, এগুলোকে চাপ হিসেবে নেয় না বিএনপি। এসব কুতর্ক। প্রশাসনের মধ্যে ছাত্রলীগ ঢুকেছে, এ কারণে প্রশাসনের সঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, এরা এমপিদের পাত্তা দেয় না। আন্দোলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ। করোনাভাইরাসের মধ্যে অরাজক পরিস্থিতিই তার সাক্ষী। বিএনপি এই সরকারের অরাজকতার বিরুদ্ধে, সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। বৃহত্তর ঐক্য গড়েই সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তুলবে বিএনপি।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তাদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে এবং আরো বেগবান হবে। পুরো জিনিসটাই হচ্ছে এ সরকারের পতন ব্যতীত কোনো একটি বিশেষ সমস্যা সমাধানের এখানে কোনো ইস্যু নাই কিন্তু। আজকে সার্বিক বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে এখান থেকে যদি মুক্ত হতে হয় তাহলে এ সরকারের পতন হতে হবে। তাই জনগণকে তাদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসবে এবং আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে নামতে হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ