ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফের আলোচনায় জিয়ার কবর

প্রকাশনার সময়: ২৯ আগস্ট ২০২১, ০৬:১১

রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আলোচনা শুরু হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে। রাজনীতিতে আবারো আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে তার কবর। জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের মূল নকশার ভেতরে থাকা জিয়াউর রহমানের কবর ঘিরে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা দীর্ঘদিনের।

বিরোধিতার পালে নতুন করে হাওয়া পায় গত বৃহস্পতিবার কবরে জিয়ার মরদেহ আছে কিনা প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশ্নে। এর পর থেকেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিএনপির অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে পুঁজিশূন্য হয়ে আওয়ামী লীগ কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জিয়াউর রহমানকে হেয়প্রতিপন্ন ও অবমূল্যায়ন করতেই প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, চন্দ্রিমা উদ্যানের সমাধিতে জিয়ার অস্তিত্বই নেই। এটা বিএনপিও জানে। এখানে রাজনীতির কোনো ছিটেফোঁটাও নেই।

এদিকে, সংসদ ভবনের আশপাশ থেকে জিয়াউর রহমানের মাজারসহ সব স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য স্পিকার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আবেদন পর্যালোচনা করে সংসদ ভবন এলাকা থেকে সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংসদ ভবনকে লুই কানের মূল নকশায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হক বলছেন, সংসদের নকশার বাইরে সব স্থাপনা সরাতে চান তারা। এখানে রাজনীতির ছিটেফোঁটাও নেই। রাজনীতি নয় বরং মহান সংসদের পবিত্রতা রক্ষায় নকশার বাইরে সব স্থাপনা সরাতে চায় সরকার। তিনি বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানের মাজারে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই। তাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যার পর মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের লাশ থাকলে ডিএনএ টেস্ট করে প্রমাণ করুক বিএনপি।

এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মত, রাজনৈতিকভাবে পুঁজিশূন্য হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। তাই কবর নিয়ে উদ্ভট আলোচনার জন্ম দিচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জিয়াউর রহমানকে নিয়ে শুরু হয়েছে টানাহেঁচড়া। সরকার পরিকল্পিতভাবে জিয়ার কবর সরিয়ে ফেলতে চায়। তবে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে টানাটানি করে ভুল করছে সরকার। জিয়ার কবর নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং বীর উত্তম জিয়াউর রহমানকে অবমূল্যায়ন বলে মনে করে বিএনপি। তারা আরো বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে আওয়ামী লীগের একটাই দাবি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। নতুন কোনো ইস্যু না পেয়ে এখন জিয়াউর রহমানকে টানাটানি করছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জানাজায় হাজার মানুষের সমাগম হলেও সেদিন কফিনে জিয়াউর রহমানের মরদেহ ছিল না। বিএনপি সত্যকে গোপন করতে চায়। কিন্তু সত্য থেকে পালিয়ে যেতে পারবে না। হাজার লোক জানাজা পড়া আর কফিনে লাশ থাকা এক কথা নয়। মানুষ একজন প্রেসিডেন্টের জানাজা পড়েছে, কিন্তু কফিনে যে লাশ ছিল তা তো দেখতে পারেনি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের জানাজায়ও হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল, কিন্তু কফিনে তো তার লাশ ছিল না।

তিনি আরো বলেন, ইতিহাসের সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায়, কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমাও করে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে যে বুলেটে, সেই বুলেটে জেনারেল জিয়াকেও চলে যেতে হয়েছে।

চন্দ্রিমায় জিয়াউর রহমানের মরদেহ রয়েছে জোর দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জিয়াউর রহমানের কবর ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিন্মমানের মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে সরকার। জিয়ার কবর ও মরদেহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ। কবর সরিয়ে নেয়ার বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে আঘাত করেছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের লাশ সেদিন দাফন করা হয়েছিল এটা তো চাঁদের আলোর মতো পরিষ্কার। এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু হতে পারে না। কারণ তৎকালীন সেনা অধিনায়ক জেনারেল এরশাদ নিজের কাঁধে জিয়াউর রহমানের লাশ বহন করেছেন। চন্দ্রিমায় যে জিয়ার মরদেহ রয়েছে সেই সাক্ষী প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চার দিকে কোনো ন্যায় নেই, সত্য নেই। এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান সাবেক রাষ্ট্রপতি বীর উত্তম প্রয়াত জিয়াউর রহমান। তিনি একজন বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বাধীনতার ঘোষক। তাকে প্রতিনিয়ত অপমান করা হচ্ছে, কটু কথা বলা হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র রক্ষায় তার অবদান অনেক। জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলবে কেমন করে। মানুষের মনের মধ্যে তার ছবি অঙ্কিত। তাকে মুছে ফেলা এত সহজ নয়। নোংরা রাজনীতির সিদ্ধান্ত জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর সিদ্ধান্ত কারণ। এ সিদ্ধান্ত সরকার নিয়ে থাকলে একদিন তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হবেন।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলছেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নে নাকি জিয়াউর রহমানকে প্রথম কবর দেয়া হয়েছিল। সেখানেও তাকে কবর দিতে কেউ দেখেনি, একটা বাক্স দেখেছিল। সেদিনকার প্রত্যক্ষদর্শী বর্তমানে সেই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন। তিনিও আমাকে জানিয়েছেন, তারা জিয়াকে দেখেননি। সে সময়ের অনেকেই জীবিত আছেন, তথাকথিত প্রথম কবরেও আসলে জিয়ার লাশ কেউ দেখেননি। এমনকি খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিচারপতি সাত্তারও দেখেননি। জিন কিংবা ভূতে দেখেছে কিনা, আমি জানি না। সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অসত্যের ওপর বিএনপির রাজনীতি দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে রাজনীতি করে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না, এটিই হচ্ছে ইতিহাসের শিক্ষা।

চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মরদেহ নেই প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আর টানাটানি করবেন না। তাদের শান্তিতে থাকতে দিন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো একইভাবে এখন সবাই বলতে শুরু করেছেন চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের শবদেহ নেই। ইতিহাস ভুলে গেছেন তারা। জিয়াউর রহমানের বডি যারা গ্রহণ করেছে তাদের অনেক এখনো বেঁচে আছেন। সর্বকালে বৃহৎ জনসমাগম হয়েছিল জিয়াউর রহমানের মরদেহ যখন মানিক মিয়া এভিনিউতে আনা হয়েছিল।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের মহাফেজখানা থেকে লুই কানের তৈরি করা ৮৭৩টি নকশা ও ৫৫টি ডকুমেন্ট ঢাকায় আসে। ৪১টি বাক্সে মোট চার সেট নকশা আনা হয়। এগুলো খুঁজে বের করতে ৩ হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়। ঢাকায় আনার পর লুই আই কানের তৈরি করা জাতীয় সংসদ ভবন ও প্রস্তাবিত সচিবালয় এলাকার মূল নকশার বিন্যাসের কাজ অনেক আগে শেষ করেছেন স্থপতিরা। করোনা মহামারি কারণে এতদিন কাজই বন্ধ ছিল। সংসদ ভবন এলাকা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের সমাধিসহ নকশাবহির্ভূত আরো ৭টি কবরও সরাতে আবেদন করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সুবজ সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর তাই সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত পাওয়ার আগে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিতর্ক এড়াতে শুধু জিয়ার কবর নয়, নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনও উচ্ছেদ করা হতে পারে। পাশাপাশি মূল নকশায় থাকলেও এখনো নির্মাণ করা হয়নি এমন স্থাপনাগুলোও নির্মাণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ