ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আজ

পরিবর্তন না নিয়মরক্ষা

প্রকাশনার সময়: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:৫৭

তিন বছর পর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বধানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এবারের কাউন্সিলের মূল প্রতিপ্রাদ্য— ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।’

সকাল সাড়ে ১০টায় শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনার পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এরপর শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশন।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। এরই মধ্যে দলের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন— ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মশিউর রহমান। নির্বাচন কমিশন প্রথমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আহ্বান করবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাব ও সমর্থনের মাধ্যমে শীর্ষ দুই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এরপর কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

আওয়ামী লীগে এখন শেখ হাসিনার বিকল্প নেই বা তৈরি হয়নি বলে মনে করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এবারো অপরিবর্তিতই থাকছে সভাপতির পদটি। তবে জল্পনা-কল্পনা চলছে সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে। তবে এই বিষয়ে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। হাইকমান্ড থেকে এখনও মুখ খুলে কিছু বলা না হওয়ায় প্রার্থীরাও মুখ খুলছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার সম্মেলনে প্রায় ডজনখানেক প্রার্থী রয়েছেন যারা দলটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। তারা হলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুবুল আলিম হানিফ ও কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দীন নাছিম। তবে এই আলোচনায় অনেকটা পানি ঢেলে দিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলে দিয়েছেন, এবার সম্মেলনে দলে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না।

অগ্রিম সম্মেলনের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পর প্রয়োজনে ২৩তম কাউন্সিল অগ্রিম হতে পারে। সেখানে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র মনে করছেন, এবার জাতীয় নির্বাচন সহজ হবে না। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার করতে হবে। সেক্ষেত্রে শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ, মাঠে-ঘাটে দৌড়াতে পারবেন, সভা-সমাবেশ করতে পারবেন— এমন কাউকেই হয়তো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক কিংবা কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। নানক এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ হিসেবে সারা দেশে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নানকের একটা পরিচিত এবং সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া বাহাউদ্দিন নাছিম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রাজনীতি করছেন। ওয়ান ইলেভেনে নির্মম-নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে নাছিমকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে নাছিমের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তৃণমূলেও রয়েছে নাছিমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতা। সবমিলিয়ে তিনিও হতে পারেন ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প।

এছাড়াও গুঞ্জন রয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে এবার কোনো শীর্ষ নেতা নির্বাচিত না হওয়ার কারণও হতে পারে নাছিমের সাধারণ সম্পাদক হওয়া। তবে এসব বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পুরোটাই নির্ভর করছে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা এবং কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর।

তবে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়েকজনকে প্রমোশন দেয়া হতে পারে। বাদ পড়তে পারেন ২-১ জন সাংগঠনিক সম্পাদক। দলীয় একজন উপ-সম্পাদককে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হতে পারে। এছাড়া অধিকাংশ সম্পাদকীয় পদ অপরিবর্তই থাকতে পারে। তাজউদ্দীনপুত্র সোহেল তাজকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য যেমন শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয়, রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের রাজনীতিতে আসার জোর আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, শনিবার অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কমিটির সভায় বেশ কয়েক নেতা প্রসঙ্গটি তোলেন। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখন সবাই বড় হয়েছে। রাজনীতিতে আসবে কী আসবে না, সেটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তারা যদি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায়, হতে পারে। এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব আসছে। বাঙালির ঐতিহ্যকে বজায় রেখে বাঙালির অধিকার রক্ষার জন্যই কাজ করবে নতুন নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে যে কাউন্সিলটি হয়েছিল, সেই কাউন্সিলে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য স্থির করেছিলেন মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আজ বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০৪১ সাল সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় থাকছে এবারের কাউন্সিলে।

সূত্র জানায়, এবার কাউন্সিলস্থলে কমপক্ষে ১ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কাউন্সিলের প্যান্ডেলটা হবে ‘ল’ শেপ। এতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লোকের বসার আয়োজন থাকবে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ