ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাপায় ‘চেয়ার’ টানাটানি

প্রকাশনার সময়: ২২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১৭

চার মাস ধরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। যদিও এই দ্বন্দ্বের শুরু আরও সাড়ে তিন বছর আগে।

মূলত জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটির মধ্যে কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। তখন থেকেই দেবর-ভাবি দুইজনই চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে। ক্রমেই তা প্রকাশ্যে আসে। টানাপড়েন থাকা সত্ত্বেও ভালোভাবেই এগোচ্ছিল পার্টি।

তবে হঠাৎ করে রওশন এরশাদ অসুস্থ হয়ে এক বছরের বেশি সময় ব্যাঙ্ককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই সুযোগে জি এম কাদের দলের ভেতরে একক আধিপত্য বিস্তার করেন। কোণঠাসা হয়ে পড়েন রওশনপন্থিরা। কিন্তু রওশন এরশাদ দেশে ফিরে পার্টির চেয়ারম্যানের পদ চাইছেন। সঙ্গে মহাসচিব পদেও পরিবর্তনের কথা বলছেন। যদিও কোনো কিছুই ছাড়তে রাজি নন জি এম কাদের।

অপরদিকে, ছাড় দিতে রাজি নন রওশন এরশাদও। ফলে দেন-দরবার ও শীর্ষ দুই পদের চেয়ার নিয়ে টানাটানি চলছে দেবর-ভাবির মধ্যে। আগামী ১ জানুয়ারি পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগে এই দ্বন্দ্বের সমাধান হতে পারে। তবে জাতীয় পার্টিতে পদ-পদবির পরিবর্তন আসবে বলেও আভাস পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, জাতীয় পার্টির দলীয় কোন্দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরবারে যায়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী জাপার শীর্ষ দুই নেতাকে ডেকে নেন। দুইজনকে মিলেমিশে দল চালাতেন বলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এমনকি এই দ্বন্দ্বের দেন-দরবার ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মহল ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে সমাধানের দৃশ্যমান কোনো কিছুই হয়নি। বরং দিন দিন জাতীয় পার্টির সংকট প্রকট আকারে ধারণ করেছে। কূটনৈতিক মহলেও গ্রহণযোগ্যতা কমেছে।

অন্যদিকে প্রায় দেড় মাস আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না জি এম কাদের। চলতি মাসেও তার মামলার শুনানি রয়েছে। রওশন ও কাদের নিজেদের অনড় থেকে সরে এলে মামলাও থাকবে না বলে অনেকেই মনে করছেন। জাতীয় পার্টিকে কবজায় রাখতে বা নিয়ন্ত্রণের জন্য দলটিকে দুটি শিবিরে বিভক্ত করা ও মামলা করে দলটির চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা আগের কৌশলগুলোর চেয়ে নতুন বলেও মনে হচ্ছে।

জাপার আরেকটি সূত্র বলছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রওশন ও জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব অবসান হতে পারে। এজন্য দফায় দফায় বৈঠক করছেন রওশনপন্থি ও কাদেরপন্থিরা। জাপার নীতি-নির্ধারণী ফোরামও সমঝোতার চেষ্টা করছে। তবে সমঝোতার পথে বাধা দাবি-দাওয়া। সেক্ষেত্রে পদ-পদবির পরিবর্তনও আসতে পারে।

সূত্র বলছে, জি এম কাদের দল গোছানোর পাশাপাশি ঢাকায় পশ্চিমা ও দক্ষিণ-পূর্ব দেশের দূতাবাসগুলোর কূটনৈতিক মহলে নিজের একটি অবস্থান সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি ভেস্তে গেছে। তার এখন আর আগের মতো কদর নেই।

দেবর-ভাবির পদ-পদবির লড়াইয়ের কারণে জাপার ভবিষ্যৎ কী হবে— সেদিকে নজর রাখছে ঢাকার বিদেশি দূতাবাস ও মিশনগুলো। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা জাতীয় পার্টির নেই। তাদের আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করতে হবে। এই বিষয়টিও ঢাকার প্রভাবশালী বিদেশি দূতাবাস ও মিশনগুলোর জানা আছে।

জানা গেছে, পার্টির রাজনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে সংখ্যাগরিষ্ঠ কো-চেয়ারম্যানদের মতামত ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় আইনি জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নেন। চারজন কো-চেয়ারম্যান ও দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছুই হয়নি।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে মুজিবুল হক চুন্নু পদেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে। মহাসচিব হিসেবে রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গার নাম শোনা যাচ্ছে। ১ জানুয়ারির আগেই এসব বিষয়ে সমাধান আসতে পারে।

এ বিষয়ে দলটির একজন প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপি নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, দেবর-ভাবির পদ-পদবির লড়াইয়ের কারণে জাতীয় পার্টি ধ্বংসের মুখে। এ লড়াই আমৃত্যু থাকবে। এতে দলের ক্ষতি হলো।

তিনি আরও বলেন, দল আছে বলে কূটনৈতিক মহল আছে। দল নেই, কিছু নেই। কূটনৈতিক মহল আগের মতো জাপার কোনো নেতাকে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও আমাদের বিশ্বাস করে না। আমরা এখন সন্দেহের পার্টি।

এ প্রসঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, নির্বাচনের আগে সব দলেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোনোটা দৃশ্যমান, কোনোটা অদৃশ্য। বর্তমানে জাতীয় পার্টিতে যে লড়াই চলছে তা থেমে যাবে। লড়াই থাকবে না। আর এর প্রভাব কূটনৈতিক মহলে কেন, কোথাও পড়বে না। জাতীয় পার্টির সবাই ঐক্যবদ্ধ আছে।

এ বিষয়ে সাবেক মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমি এখনও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছি। নির্বাচনের আগে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে সে অনুযায়ী কাজ করব। মামলা করে জি এম কাদেরকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াই স্বাভাবিক। এখানে অন্য কোনো কিছুই নেই। এসব বিষয় জানতে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ