ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চিনিতে নতুন খেলা

প্রকাশনার সময়: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৩৭ | আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৪০

এবার চিনি নিয়ে নতুন খেলায় মেতেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হঠাৎই বাজার থেকে উধাও চিনি। ফলে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। এছাড়া সরকারের বেঁধে দেয়া দাম মানছে কেউ। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করছে। অসহায় ক্রেতারা অতিরিক্ত দামেই কিনতে বাধ্য হচ্ছে। বিক্রেতারা তাদের সেই একই বুলি আওড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, ‘বেশি দামে কিনছি বলেই বেশিতেই বিক্রি করছি।’ ক্রেতারা বলছেন, জনগণকে জিম্মি করা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ব্যবসায়ীর এসব কাজ করছে। বার বার একই কাজ করে ছাড় পাচ্ছে বলে করেই যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্যে এমন করসাজি ব্যবসায়ীদের অসাধু একটি চক্র করছে। সরকারের নাকের ডগায়ই তারা এ কাজ করছে। সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা এখন বেপরোয়া।

পাইকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন কমেছে। যার জন্য বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের ইউসুফ বলেন, যে দিন থেকে খোলা ও প্যাকেট চিনি ৯০ ও ৯৫ টাকা কেজি ঘোষণা করা হয়েছে তারপর থেকেই আমরা চিনি পাচ্ছি না। তাই বিক্রিও করতে পারছি না।

জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। অথচ ২২ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেটজাতের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকরের কথা থাকলেও মানা হয়নি।

খুচরা দোকানদাররা অবশ্য সেই পুরোনো কথাই বলছেন। বেশি দামে কেনা তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। কোম্পানিগুলো মিলেমিশে দাম বাড়াচ্ছে, আপনারা তাদের কাছে জানতে চান কেন দাম বাড়াচ্ছে। সরকারি তথ্য মতে, দেশে চিনির মোট চাহিদার বড় একটি অংশ মেটানো হয় আমদানি করা চিনির মাধ্যমে। এই চিনি আমদানি হয় মূলত সিটি, মেঘনা, এস আলম, ইগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপের হাত ধরে। এই ব্যবসায়ীরা এখন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের অজুহাতে চিনির দাম বাড়াচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চিনির সব ধরনের কাঁচামাল রয়েছে কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদা অনুসারে চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় চিনি সরবরাহ কম থাকায় চিনির দাম বাড়ছে।

দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার দর মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ তথ্য মতে, এক সপ্তাহ আগে চিনির কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন সেই চিনি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা ১০০ টাকায়।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। তবে টিসিবির চিনির দাম বাড়েনি। তিনি বলেন, কেন দাম বাড়ল তার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আলাদা বিভাগ রয়েছে, তারা বিষয়টি বলতে পারবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বেশির ভাগ দোকানে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ কিংবা তিন দিন আগের কেনা চিনি কিছু কিছু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে। তবে এ সময় বাজার ও দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত চিনির দেখাই মেলেনি। এই দোকানগুলোতে এক সপ্তাহ আগেও চিনি বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা কেজিতে। আর প্যাকেটজাত চিনি ছিল ৯৫ টাকা কেজি।

অথচ গত ৬ অক্টোবর সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খোলা চিনি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাতের দাম ৯৫ টাকায় বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি। বরং এখন উল্টো দাম বাড়ছে।

তার আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৪ টাকা আর প্যাকেটজাত ৮৯ টাকা। নির্ধারিত দামে চিনি সরবরাহ না দেয়ায় দাম বাড়াতে বাধ্য হয় সরকার। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে চিনি।

বাড্ডার ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, উত্তর বাড্ডা আড়ত থেকে মাল এনে এখানে পাইকারি বিক্রি করি। আমি পাইকারি বিক্রি করছি ১০৫ টাকা। আর খুচরা বিক্রি করছি ১১০ টাকা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তেল, আটা এবং চিনি সব কিছুর দাম আবার বাড়ছে। জিনিসপত্রের যেভাবে দাম বাড়ছে, কয়েকদিন পর মানুষ ব্যবসায়ীদের পিটিয়ে মারবে। তিনি অভিযোগ করেন, ১০০ টাকা কেজিতে ৫ বস্তা মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ চিনির অর্ডার দিয়েছেন ৫ দিন আগে। এরপর কোম্পানির আর কোনো খবর নেই। দাম বাড়ছে, এখন অর্ডার দিয়ে মাল পাচ্ছি না, আর যখন দাম কমবে জোর করে দিয়ে যায় কোম্পানিগুলো। জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ডিলার দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোম্পানিতে চিনি নেই, চিনি সংকট এ কারণে আমরা চিনি পাচ্ছি না। তাই দোকানদারদের দিতে পারছি না। তিনি বলেন, কোম্পানির কাছে জানতে চাইলে কোম্পানি জানিয়েছে, গ্যাস সংকটের কারণে চিনির উৎপাদন কমে গেছে। আগের যেখানে দিনে ৫ হাজার টন উৎপাদন হতো এখন ১ হাজার টন উৎপাদন হচ্ছে। এ কারণে চাহিদা অনুসারে চিনি পাচ্ছি না। প্রায় একই কথা বলছেন আমিন ব্রাদার্সের ডিলার আমিনুল। তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটের কারণে চিনির উৎপাদন কমেছে। যে চিনি একদিনে দেয়া যেত এখন সেই চিনি দিতে ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগে।

এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, কোম্পানিতে চিনির কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, কোম্পানির দিনে ৫ হাজার টন চিনি পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু পরিশোধন করছে মাত্র ১ হাজার টন। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই বাজারে দাম স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ