২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এজন্য ২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে তফসিল ঘোষণা করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরির কাজও শুরু করেছে ইসি। এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু হবে আগামী ১৭ জুলাই। আর শেষ হবে ৩১ জুলাই। সংলাপ শেষেই চূড়ান্ত হবে সংসদ নির্বাচনের কর্ম-পরিকল্পনা। নেয়া হবে নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে ভোটের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটের মাঠ গোছাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের টার্গেট করে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত রোডম্যাপের কাজ শুরু করা হয়েছে। নির্বাচনের ৪৫ দিন হাতে রেখে ২০২৩ সালের ২০-৩০ নভেম্বরের মধ্যে দেয়া হতে পারে তফসিল। আর তফসিল ঘোষণার অন্তত তিন মাস আগে (২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মধ্যে) সব ধরনের কাজ শেষ করার রূপরেখা থাকছে ইসির রোডম্যাপে। আর নির্বাচন কমিশন বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ভাবনা রয়েছে। ওই সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই হবে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়াও কমিশন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সবার জন্য সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং প্রতিটি ভোটার আনন্দমুখর পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মাসে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এই মহা কর্ম-পরিকল্পনা। এ ছাড়াও কর্মপরিকল্পনার এবারের খসড়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে—নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও এনজিওগুলোর সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও প্রস্তুত করা, নির্বাচনী আইন সংস্কার, নতুন দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষণ সংস্থান নিবন্ধন, ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ইলেকট্রনিক ভোট মেশিন (ইভিএম) প্রস্তুতকরণের কাজও। তবে ভোট ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা—এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজনৈতিক দলগুলো। আর এসব কাজের টাইমফ্রেম নির্ধারণ করে তৈরি করা হচ্ছে এবারের নির্বাচনী রোডম্যাপের খসড়া।
সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। আর প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের ১২৩ অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করতে হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেন, এবারের রোডম্যাপটি হবে বিশ্লেষণধর্মী। রোডম্যাপই কথা বলবে, কীভাবে আমরা প্রতিটি ধাপে নির্বাচন নিয়ে কাজ করব এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলন ঘটাব। চূড়ান্ত রোডম্যাপে প্রাধান্য পাবে— রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ ও সুপারিশ। যোগ হবে অন্যান্য অংশীজনের মতামতও।
আরেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের চাহিদা বলে দেয় এবং আমরা সেই সিদ্ধান্তগুলো বিবেচনা করে যদি দেখি যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য এটা ভালো পরামর্শ তাহলে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করব।
তিনি বলেন, রোডম্যাপ তৈরি করে একটা ইস্যু দাঁড় করানো হবে। আমরা কী নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। দলগুলোর কাছে আমরা কী কী তথ্য চাই। তারাও আমাদের কী ধরনের সহায়তা চায়। আমাদের একটা গাইডলাইন থাকবে, এটা তাদেরও জানাব। তারপর প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হবে। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করা আমাদের কাছে আমানত। সেই আমানত রক্ষা করার জন্য যেকোনো অ্যাকশন নেয়ার প্রয়োজন হলে কমিশন সেটা নেবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আমরা।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমাদের ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গতানুগতিক পদ্ধতিতে আমরা যাব না। আশা করছি, আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু নতুনত্ব থাকবে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, রোডম্যাপে আরো থাকছে, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কীভাবে গ্রহণযোগ্য করা যায় তার ব্যাখ্যা। ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ন্ত করা, মার্চের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সম্পন্ন করা।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ