কোরবানি দেওয়া পশুর চামড়া কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। গরুর চামড়া কিনতে কিছুটা আগ্রহ থাকলেও খাসির চামড়ার ক্ষেত্রে তা যেন একবারেই নেই। ফলে ১০-১৫ টাকা পিসেও কোনো মৌসুমি ব্যবসায়ী খাসির চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ক্ষেত্র বিশেষ বিনামূল্যে খাসির চামড়া দিলেও কেউ তা নিতে রাজি হচ্ছেন না।
রোববার (১০ জুলাই) সকালে ঈদুল আজহার নামাজের পরই শুরু হয় পশু কোরবানি। দুপুরের পর মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনতে শুরু করেন। তবে এবার খাসির চামড়া কিনতে তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। ফলে অনেকেই খাসির চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
রাজধানীর দক্ষিণ পাইকপাড়া থেকে দুটি খাসির চামড়া বিক্রি করতে কল্যাণপুরের নতুন বাজারে আসেন মুদি ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ। তবে চামড়ার দাম শুনে মেজাজ হারান তিনি। ব্যবসায়ীরা প্রতিপিস খাসির চামড়া পাঁচ টাকা ও প্রতিপিস গরুর চামড়া সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বলছেন।
জাফর আহমেদ বলেন, ছাগলের চামড়ার যে দাম বলা হচ্ছে তা খুবই কম। ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে এখানে এলাম। এখন তো দেখি রিকশা ভাড়াও উঠবে না।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা ফারুক আহমেদ এবার একটি গরু ও খাসি কোরবানি দিয়েছেন। কম দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে পারলেও খাসির চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না।
ফারুক আহমেদ বলেন, গরুর চামড়াটি কোনো রকমে ২৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু খাসির চামড়াটা বিনামূল্যে নিচ্ছে না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ভেবেছিলাম চামড়া দুইটি বিক্রি করতে পারলে টাকাগুলো গরিব মানুষদের দিয়ে দেব। কিন্তু এখন তো উল্টো বিপদে পড়েছি। এই খাসির চামড়ার এখন কী করব। কাউকে না দিতে পারলে তো কিছুক্ষণ পর পচে দুর্গন্ধ বের হবে।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা মো. হালিমও একটি গরু ও ছাগল কোরবানি দিয়েছিলাম। গরুর চামড়াটি ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও খাসির চামড়া কেউ কিনছে না। পরে অনেক জোরাজুরি করে বিনামূল্যে খাসির চামড়াটি এক মৌসুমি ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল চামড়ার ব্যবসায়ীরা তাদের খাসির চামড়া নিতে না করে দিয়েছে। আর কেউ নিয়ে গেলও তারা কিনছেন না। ফলে তারা এবার খাসির চামড়া কিনছেন না।
রাজধানীর রামপুরা ও বাড্ডার বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া কিনছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মো. হেলাল। খাসির চামড়ার অনীহার বিষয়ে তিনি বলেন, একটি খাসির চামড়া বিনামূল্যে নিলেও এটি প্রক্রিয়া করতে পায় ৫০ টাকার মতো খরচ পড়ে। এরপর মূল চামড়া ব্যবসায়ীর কাছে এই চামড়াটা নিয়ে গেলে তারা ২০-৩০ টাকাও দাম দিতে চান না। তাহলে আমরা এই চামড়া নিয়ে কী করব। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে চামড়ার ব্যবসায় খুব খারাপ অবস্থা চলছে। গরুর চামড়া যদি বড় হয় তাহলে কোন রকম কেনাবেচা করে কিছুটা আয় করা যায়। তবে খাসির চামড়ায় বিন্দুমাত্র চাহিদা নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, গরুর চামড়ার তুলনায় খাসির চামড়া অনেক ছোট। যেহেতু আমাদের ব্যবসাটি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে, সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে খাসির চামড়ার কোন চাহিদা না থাকায় আমরা খাসির চামড়া এবার কিনছি না। আর কিনলেও তা খুব অল্প পরিসরে। তাই খাসির চামড়া এবার বলতে গেলে কোন দামই উঠেনি।
চামড়া ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ছাগলের চামড়ার দাম কম। এবার ৬০০ পিস খাসির চামড়া পেয়েছি। আর ৫০-৬০ পিস গরুর চামড়া পেয়েছি। গতবার চামড়া বিক্রি করে হাজার তিনেক টাকা লাভ ছিল। এবার কী হয় বলতে পারছি না।
গতবছরের তুলনায় প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা বাড়িয়ে কোরবানির গরু ও খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এবার কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকাতে ৪৭ থেকে ৫২ টাকা প্রতি বর্গফুট। গত বছর ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আর ঢাকার বাইরে গরুর চামড়ার দাম হবে প্রতি বর্গ ফুটে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুটে ১৮ থেকে ২০ টাকা। খাসির চামড়া সারাদেশে একই দামে বিক্রি হবে। গত বছর খাসির চামড়ার দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
নিয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ