দেশে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এসময় সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী।
রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে মহাখালীর জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (নিপসম) মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় পুষ্টি দিবস ২০২২ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ অধিকহারে বাড়ছে। আমাদের করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। মৃত্যুও শূন্যের কোটায়। এটি আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমাদের সংক্রমণ যেনো বাড়তে না পারে সেজন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। শুরুতে মৃত্যু অনিয়মিত থাকলেও ওই বছরের ৪ এপ্রিল থেকে করোনায় মৃত্যু ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনার সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা দেখা গেছে।
করোনা পরিস্থিতি কমে আসার পর গত বছরের ডিসেম্বরে ওমিক্রন শনাক্ত হলে ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকে। কিছুদিন তাণ্ডব চালানোর পর এখন করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
প্রতিবেশি দেশ ভারতে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ ফের বেড়ে গেছে। এর ফলে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রণেই আছে। মৃত্যুও শূন্যের কোটায়। এটি ধরে রাখতে হলে সবাইকেই সচেতন হতে হবে।
দেশের ১৩ কোটি মানুষ টিকা পেয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন খুব একটা লোক করোনার টিকা নেওয়ার বাকি নেই। আমরা ১৩ কোটি মানুষকে টিকা দিয়েছি। যারা টিকা পায়নি তারা আসলে টিকা দিতে চায় না। আমরা তাদের বারবার টিকা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অনেকে দেশে টিকা কার্যক্রমকে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে মেলায়। কিন্তু তাদের জন্যসংখ্যা অনেক কম। আমরা দিনে এক কোটি টিকাও দিয়েছি। বিশ্বের অনেক দেশে সে পরিমাণ মানুষই নেই।’
পুষ্টির বিষয়টি সরকার গুরুত্বে সঙ্গে দেখছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘ভালো খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে। ভালো খাওয়ার বলতে পুষ্টিকর খাবার। আমাদের দেশে পুষ্টি সেবার অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের অনেক উন্নয়ন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমরা এ সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। সেখানে মানুষকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি কি খেতে হবে, কি খাওয়া উচিত নয় তাও শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা লবণ পরিহার করতে বলি। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার বর্জন করতে বলি। মানুষকে সচেতন করতে আমাদের অনেক জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে তা আরও বাড়ানো হবে।’
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। টিবি, পোলিও, ম্যালেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগ আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। এজন্য আমাদের মৃত্যুহার কমেছে। কিন্তু আমাদের অসংক্রামক রোগ অনেক বাড়ছে। ক্যান্সারের মতো রোগ বাড়ছে। এসবের জন্য খাদ্যাভাস ও জীবনাচরণের দিকে নজর দিতে হবে। এমন খাবার খেতে হবে যেটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।’
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘আধুনিকতা আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিয়েছে। সন্তানের জন্য মায়ের থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিষয় বাচ্চার শাল দুধ। কিন্তু সেটা এখনকার বাচ্চারা ঠিকমতো পায় না। অধিকহারে সিজার হওয়ায় প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু নরমাল ডেলিভারি হওয়া ভালো। যত বেশি সিজার ততবেশি সমস্যা বাড়ছে। তাই এসব বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।‘
স্বাস্থ্যে অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশিদ আলম বলেন, স্বাধীনতার শুরু থেকে আমাদের নান পুষ্টি সমস্যা ছিল। আমাদের মানুষজনের ওজন কম ছিল, স্বাস্থ্য কম ছিল। এখন তা কমে এসেছে। তবে নগরায়নের ফলে পুষ্টি চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য কমিউনিটি ক্লিনিককে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, স্বাচিপের মহাসচিব এম এ আজিজ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশেন (বিএমএ) মহাসাচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ডা. জোবায়দা নাসরিন, জাতীয় পুষ্টি কার্যক্রমের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ