ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কমেছে খাদ্যের মজুদ

প্রকাশনার সময়: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৪৭ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৪৯

দেড় মাসেই সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুদ কমেছে ৬ লাখ টন। ফেব্রুয়ারির মাঝে খাদ্য মজুদে নতুন রেকর্ড গড়ে। তখন ২০ লাখ টন টনের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। সেই মজুদ বর্তমানে নেমে এনেছে ১৪ লাখ টনে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খুব একটা চাল আমদানি হচ্ছে না। খাদ্য মজুদ কমার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় সরকার। যা মজুদ আছে তাতেই খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

অতি দরিদ্রদের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রম ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) এবং সারা দেশে খোলাবাজারে খাদ্যপণ্য বিক্রি বা ওএমএস কার্যক্রম পুরোদমে চলায় খাদ্য মজুদ কমেছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘১৪ লাখ টন পর্যায় মজুদ। বেসরকারি পর্যায়েও দেশে প্রচুর ধান-চাল মজুদ আছে। বেশ কিছুদিন ধরে চালের দাম স্থিতিশীল আছে। বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে কয়েক দিন পর; চলবে আগস্ট পর্যন্ত। খাদ্যের মজুদ ফের বাড়বে।’ চালের দাম বাড়বে না। বোরোর ভর মৌসুম শুরু হলে উল্টো কমবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মন্ত্রী।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে রাজধানীর বাজারগুলোতে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে। গত এক মাস এই একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে। গত এক-দেড় মাস একই দামে এই চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে এক বছরে বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

গত বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে মোট খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ এক হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুদ হচ্ছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন। গম এক লাখ ৪৭ হাজার; আর ধান ৪৬ হাজার টন।

‘বর্তমান মজুদ সন্তোষজনক’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

চলতি বোরো মৌসুমে ১৭ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার। এর মধ্যে ৬ লাখ ৫০ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ২৭ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪০ টাকা এবং আতপ চাল ৩৯ টাকা।

চাল ও আটার দাম লাগামের মধ্যে রাখতে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্যসহায়তা প্রদান এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে ২০১২ সালে ওএমএস ব্যবস্থা চালু করে সরকার। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে দেশব্যাপী ডিলারদের দোকান ও খোলা ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা একবারে সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল ও আটা কিনতে পারেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চাপে আছে প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ওএমএসের আওতা বৃদ্ধি এবং দেশে খাদ্যশস্যের বাফার মজুদ কিছুটা হলেও ক্রেতা-ভোক্তার জন্য স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করছেন দেশে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

তিনি বলেন, খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম জোরদার হলে বাজারে ওই পণ্যগুলোর মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যার সুফল ভোক্তারা পাবে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারি গুদামে নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে অন্তত ১০ লাখ টন চাল থাকতে হয়। এর বাড়তি থাকা আরো ভালো। খাদ্যশস্যের বর্তমান মজুদ দিয়ে দেশে চাল ও আটার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি যে কোনো সংকট মোকাবিলা সম্ভব। রমজান মাসে সরকার এক লাখ পরিবারকে স্বল্প দামে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করে খুবই ভালো কাজ করেছে বলে মনে করেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এতে ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামাতে সহায়তা করেছে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ