সামনে ঈদ আনন্দের পাশাপাশি সবার মধ্যে কিছুটা উৎকণ্ঠাও রয়েছে। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় তারা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সংসার চালাতে গিয়ে এদের শুধু হিমশিম খেতে হচ্ছে এমনটাই নয়, রীতিমতো বিপাকে পড়ে আছেন। আর সন্তান-সন্ততির পড়াশোনা খরচসহ যাবতীয় ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
এক সময় যারা ব্যয় বহন করে সামান্য হলেও পুঁজি সঞ্চয় করতেন, এখন তারা ঋণের টাকাও শোধ করতে পারছেন না। এদিকে, ঈদ সামনে রেখে অনেকে বাড়তি খরচ সামাল দিতে ঋণের জন্য ছুটছেন। এজন্য অনেকে পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী মাল্টিপারপাস কোম্পনিগুলোর কাছে ঋণের জন্য ধরনা দিচ্ছেন। পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিচ্ছেন। আর এ সুযোগে চড়া সুদ আদায় করে নিচ্ছে মাল্টিপারপাস কোম্পানিগুলো।
সূত্র মতে, দেশে দু’শ্রেণির মধ্যবিত্ত রয়েছে। এক শ্রেণির আয় সামান্য বেড়েছে। বেতন-বোনাস মিলে তারা আগের চেয়ে বেশি টাকা পাচ্ছেন। আর অন্য অংশের ব্যয় অনেক কমেছে। তারা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামাল দিতে পারছেন না। এদের মধ্যে অনেকে তাদের জমানো পুঁজি বসে বসে খাচ্ছেন। আর অনেকের পুঁজি শেষ হওয়ার পর বাড়তি খরচ সামাল দিতে ঋণ করছেন। ঈদে আরো খরচ বেড়ে যাওয়ায় তা সামাল দিতে ঋণের জন্য ছুটছেন।
সূত্র জানায়, আগের চেয়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া বাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়েনি অনেকের। এছাড়া মধ্যবিত্তদের কেউ কেউ শেয়ার বাজারে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব। অনেক দিন থেকে তারা দিশেহারা হয়ে আছেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। আর ঈদে পরিবার পরিজনের জন্য নতুন জামা কাপড় কেনার জন্য তাদেরকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। আর এজন্য অনেকে বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নিচ্ছেন। বিশেষ করে মাল্টিপারপাস কোম্পানিগুলোর কাছে বেশি যাচ্ছেন এসব মানুষ।লালবাগের জগন্নাথ সাহা রোড়ে বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবী আফজাল হোসেন জানান, বেতন বোনাস মিলে তিনি প্রায় ১৭ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু তার বাসা ভাড়া, স্ত্রী, ৩ সন্তান ও নিজের জন্য ঈদের জামা কাপড় কিনতে হবে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের জন্যও জামা-কাপড় কিনতে হবে। ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়া সব মিলিয়ে তার আরো দ্বিগুণ টাকা দরকার। এজন্য তাকে বাধ্য হয়েই চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে জানান, জিনিসপত্রের দাম আমাদের নাগালের বাইরে। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
শহীদ নগর এলাকার গৃহিণী ফাতেমা খানম জানান, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে আমরা নিরূপায় হয়ে পড়েছি। আমাদের যে আয় তার চেয়ে প্রতিমাসে বেশি ব্যয় হয়। আর ঈদের কারণে খরচ বেড়েছে অনেকগুণ। সম্মান আর সামাজিকতা রক্ষার জন্য এখন আমাদের ঋণের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।
আজিমপুরের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ম্যানেজার ওমর ফারুক জানান, ঈদের কারণে এমন লোকজন ঋণের জন্য আসেন তাদেরকে আমরা ঋণ না দিয়ে পারি না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন এ সময় ঋণ নিতে আসেন। তাদের অনেকের কথা অন্তত ঈদের এ সময়টা আমাদের লোন দেন। তা না হলে আমাদের মান-সম্মান রক্ষা করা দায়।
কামরাঙ্গীর চরের আল-আরাফাহ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান জানান, ঈদ সামনে রেখে ঋণ নেয়ার গ্রাহক বেড়ে গেছে। পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নিচ্ছেন অনেকে। এমনকি অনেক গ্রাহক আছেন যারা আগে কখনো লোন নিতে আসেননি। ঈদ সামনে রেখে তারা লোন নিতে আসছেন। আমাদের সমাজে মধ্যবিত্তের দুইটি অংশ রয়েছে। এক অংশের আয় কমেছে। তার কারণ হলো ভোগের চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে, ব্যয় বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। আর তা সামাল দিতে গিয়ে তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। আর এ সুযোগ নিচ্ছে মাল্টিপারপাস কোম্পানিগুলো। তারা সুযোগ বুঝে অনেক চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য করছে। অপরদিকে, মধ্যবিত্তের এক অংশের আয় বেড়েছে। তারা আগের চেয়ে বেতন-বোনাস বেশি পাচ্ছেন। এসব মানুষ আগে ঈদের সময় একটা জামা কিনলেও এখন এর সঙ্গে কিছু বাড়তি জামাকাপড়ও নিচ্ছেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ