ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভিন্ন কৌশলে জাল রুপির কারবারিরা

প্রকাশনার সময়: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৪৩

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জাল রুপির কারবারিরা। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে থেকে আসা জাল রুপিসহ কারবারিরা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে তারা। এরই অংশ হিসেবে এবার তারা লালবাগে একটি জাল রুপি তৈরির কারখানা দিয়ে বসেছে। গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ৪ জনকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃতরা সবাই দীর্ঘদিন ধরেই জাল টাকা ও রুপি কারবারে যুক্ত ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা ও রুপি কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। এর অংশ হিসেবে গতকাল লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকার বেড়িবাঁধসংলগ্ন একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা আগে জাল টাকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এবার তারা জাল রুপি তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কারণ সম্প্রতি কয়েকটি অভিযানে জাল রুপির কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়। তারা পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানির আড়ালে জাল রুপি দেশে নিয়ে আসছিল। ওই চক্রগুলো গ্রেফতারের পর নতুন করে দেশে জাল রুপি তৈরির করা উদ্যোগ নেয় গ্রেফতারকৃতরা। এ সময় জাল টাকা ও রুপি তৈরি করার জন্য ব্যবহূত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন রকমের কালি, স্ক্রিন ফ্রেম, বিশেষ ধরনের কাগজ, কেমিক্যালস, স্ক্যানার মেশিন, কাটার ও স্কেল ইত্যাদি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। জানা গেছে, করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ঈদ উপলক্ষে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য এক প্রকার বন্ধ ছিল। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ধীরে ধীরে জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদের বাজার। এই সুযোগে তৎপরতা শুরু করে জাল টাকা ও জাল রুপি তৈরির কারিগররা। তাদের কারখানা থেকে বানানো জাল টাকা ও রুপি বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে জাল টাকার কারিগরদের শনাক্তে মাঠে নামে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সকালে লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধসংলগ্ন একটি বাসায় হানা দেয় ডিবি গুলশান বিভাগের অবৈধ মাদক উদ্ধার টিম। এ সময় ওই বাসা থেকে বাংলাদেশি টাকা এবং ভারতীয় রুপি তৈরি করার একটি ঘরোয়া কারখানা আবিষ্কার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন মূল্যমানের প্রায় ২০ লাখ জাল বাংলাদেশি টাকা এবং দেড় লাখ ভারতীয় জাল রুপি। গ্রেফতার করা হয় জাহাঙ্গীর আলম, আলী হায়দার, তাইজুল ইসলাম ওরফে লিটন ও মহসিন ইসলাম মিয়াকে। জব্দ করা হয় জাল টাকা ও রুপি তৈরি করার জন্য ব্যবহূত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন রকমের কালি, স্ক্রিন ফ্রেম, বিশেষ ধরনের কাগজ, কেমিক্যালস, স্ক্যানার মেশিন, কাটার ও স্কেল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ডিবির জয়েন্ট কমিশনার (উত্তর) হারুন-অর-রশিদ ও ডিসি ডিবি মশিউর রহমান।

জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পাস লিটন জাল টাকা ও রুপি তৈরি কারখানার মূল কারিগর। তিনি দীর্ঘদিন নীলক্ষেত এলাকায় কম্পিউটারের দোকানে গ্রাফিক্সের কাজ করত। এক সময় সে বিভিন্ন ধরনের জাল কাগজপত্র ও দলিল বানাত। ধীরে ধীরে সে জাল টাকা ও রুপি তৈরিতে হাতেখড়ি দেয়। এক পর্যায়ে সে পটু হয়ে যায়। জাল টাকা ও রুপি তৈরির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে লিটন বিশেষ ধরনের কাগজ কিনে জোড়া লাগানো এবং একটি কাগজে বঙ্গবন্ধু, গান্ধীর ছবি স্ক্রিন প্রিন্টিং/জলছাপ দেয়া রঙের সমন্বয়ের কাজ করে। এরপর বঙ্গবন্ধু বা গান্ধীর ছবি সে নিজে মূল টাকা থেকে স্ক্যানিং করে পেনড্রাইভে নিয়ে রাখে। নিরাপত্তা সুতা তৈরি করার জন্য ডায়াস কিনে নেয়। জলছাপ দেয়া হলে দুইটি বিশেষ ধরনের কাগজ একসঙ্গে জোড়া দিয়ে শুকায় এরপর টাকা প্রিন্টিংয়ে যায়। তার এসব কাজে সহযোগিতা করে আলী হায়দার। জাল টাকা তৈরি করার পরে তারা এক লাখ টাকা বিক্রি করত মাত্র ১২ থেকে ১৫ হাজারে। গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর ও মহসিন মূলত লিটনের কাছ থেকে জাল টাকা কিনে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করে। এজন্য জাহাঙ্গীরের নওগাঁ, নাটোর, বগুড়াসহ দেশের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলের অনেক ডিলার রয়েছে। সেখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা ব্যস্ততম এলাকায় রেস্টুরেন্ট, ভোজ্যসামগ্রী, প্রসাধনী ও কাপড়ের মার্কেটে আসল টাকার ভেতরে জাল টাকা ঢুকিয়ে দেয়।

সূত্রমতে, গ্রেফতার লিটন জাল রুপিগুলো পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করেছিল দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতে বিক্রি করার জন্য। কারণ সম্প্রতি জাল রুপির কারবারিরা গ্রেফতার হওয়ায় তার ধারণা ছিল তৈরি করা জাল রুপিগুলো চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু তার আগেই লিটনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়া গ্রেফতার আলী হায়দার টাকা তৈরিতে সহযোগিতা এবং বড় ডিলারের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে থাকে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। ডিবির জয়েন্ট কমিশনার (উত্তর) হারুন-অর-রশিদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম জাল টাকা ও রুপির পাইকারি ব্যবসায়ী। তিনি গতকাল সকালে নাটোর থেকে ঢাকায় আসেন জাল রুপি সংগ্রহ করতে। এরপর গোয়েন্দারা তাকে অনুসরণ করা শুরু করে। এরপর নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ছয়তলা বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় চক্রের সদস্যদের। গত ৫/৬ মাস ধরে ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে রেখেছিল চক্রটি।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ