ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটর করা হচ্ছে

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
প্রকাশনার সময়: ০৮ মার্চ ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২, ০৯:৩৮

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক মন্দা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাঁর সরকার দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজার মনিটর করছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে এখানেও সে প্রভাবটা পড়ে, আর কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণি রয়েছে এই সুযোগটা নেয়ার জন্য। শেখ হাসিনা সোমবার দুপুরে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে একটা কথা এসেছে। দ্রব্যমূল্য কেবল বাংলাদেশে নয়, করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি মন্দা। যে কারণে আজ সব দেশে সেই সুদূর আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সর্বত্র দ্রব্যমূল্য ভীষণভাবে বেড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। যার কুফলটা আমরা ভোগ করছি। আমাদের এখানে কিছু জিনিসের দাম বাড়ছে কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে এখানেও তার প্রভাবটা পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘তাছাড়াও কিছু লোক এখানে আছেই এই সংকটময় মুহূর্তে ব্যবসা করে তারা দুই পয়সা বেশি কামাই করতে চায়। সেখানে মনিটরিং আমরা করছি।’

এ সময় দেশব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমেই যে কোনো সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে সবার প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশবাসীকে আমি বলব খাদ্যে যেন কখনো আমাদের অভাব না হয়। যে যা পারবে কিছু উৎপাদন করবে। নিজের চাহিদা নিজে পূরণের চেষ্টা করবেন। এটা করতে পারলে আমাদের কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান এমপি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, শ্রম ও মানবসম্পদ সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও এসএম মান্নান প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে যা দেশবাসীর ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে। বড় কথা আমাদের কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। আমাদের সব পরিকল্পনা নিজেদের অর্থায়নেই বাস্তবায়ন করছি। সরকার প্রধান বলেন, খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর পুষ্টির ব্যবস্থা করেছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও বই দেয়া— সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাই পারি’—এটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র অর্জন। অর্থনৈতিক মুক্তির যে কথা জাতির পিতা বলে গেছেন, অন্তত কিছুটা হলেও তা অর্জন করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে কোনো দুর্যোগ আমরা মোকাবিলা করতে পারি, করোনার সময় এটা আমরা প্রমাণ করেছি। অনেক ধনী দেশ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি, কিন্তু আমরা দিচ্ছি। অথচ, ২৯ বছর যারা এদেশের ক্ষমতায় ছিল তারা মানুষকে কিছুই দিতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের উল্লেখ করে বলেন, মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে সমাজে একটা আমূল পরিবর্তন আমরা আনতে পেরেছি। এখন আর পুরনো কাপড় বিদেশ থেকে এনে পড়তে হয় না। অন্তত মানুষের এই জীবন মানটা আমরা উন্নত করতে পেরেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। কারণ, তারা জানে এই ভাষণের মধ্যদিয়েই জাতির পিতার আহ্বানে এ দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই, যারা শক্রুর পক্ষে, যাদের বাঙালি পরাজিত করেছে, তারা ৭ মার্চ কখনোই পালন করতে পারে না, এটা হচ্ছে বাস্তব কথা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ওই পরাজিত পাকিস্তানিদের গোলামি করা, পদলেহন, তোষামোদি করা-এটা তাদের মজ্জাগত। বংশ পরম্পরায় যেন এটা নিয়েই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বলব কে ৭ মার্চের ভাষণের দিবসটা পালন করল না করল, সেটা নিয়ে বোধ হয় আমাদের চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ, এটা ধরেই নিতে হবে এরা সেই গোষ্ঠী যারা এ দেশের স্বাধীনতাই চায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা সেই গোষ্ঠী যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। এরা ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করে, যাতে আইভি রহমানসহ দেশের অসংখ্য নেতাকর্মীকে নিহত হয়। এরা আন্দোলনের নামে জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে—কাজেই তাদের কাছে এদেশের মানুষ কি বা আশা করতে পারে।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্ব দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় আজকে নেতৃত্বশূন্য। ‘ফিউজিটিভ’ অবস্থায় আরাম-আয়েশে বিদেশে অবস্থান করে দেশের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া তাদের যেন করণীয় নেই। মানুষকে কিছু দিতে না পারলেও হাজার হাজার কোটি টাকা তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে।

তাঁর সরকার গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে, এর সুযোগ নিয়ে তারা কেবল দেশের বিরুদ্ধে সর্বনাশ করে যাচ্ছে। তবে, জাতির স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য এবং সবাইকে এটা মাথায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, কী পেলাম কি পেলাম না সেটা বড় কথা নয়, কতটুকু বাংলাদেশের মানুষের জন্য দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা। কেননা তাদের জন্য আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনটাই দিয়ে গেছেন। আমার মা’, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন, লাখো শহিদ জীবন দিয়েছেন। কাজেই, তাঁদের স্বপ্নগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ এখনো আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। এর প্রতিটি লাইন অর্থবহ, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। বিশ্বের আর কোনো ভাষণ এত বছর এরকম প্রাণবন্ত থাকেনি যেভাবে ৭ মার্চের জাতির পিতার ভাষণ মানুষকে উজ্জ্বীবিত করছে। কাজেই, এই দিবসটা শুধু পালন নয়, একে অনুসরণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ