ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা

প্রকাশনার সময়: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:২০

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া প্রস্তাবনা মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ২০টি শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি ভবনে স্থাপিত মডেল ‘শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী এই কথা বলেন।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘দেশে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে পৃথক আইন বলবৎ থাকলেও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পুরুষ অথবা নারী হিসেবে পরিচিতি নির্ধারণ না থাকায় সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তারা নিগৃহীত হচ্ছেন, কেউ কেউ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবিকার্জনের তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে সমাজে অসাম্য ও বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসন আছে।’

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রীপরিষদে পাঠানো প্রস্তাবনায় তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের পুরুষবাচকতা অথবা নারীবাচকতা নির্ধারণের পর চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে তাদের সম্পদের উত্তরাধিকার অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। লিঙ্গের পুরুষবাচকতা অথবা নারীবাচকতা নির্ধারণ করা সম্ভব না হলে তাদের নারী ও পুরুষ উত্তরাধিকার পরিমাণ যোগ করে এর অর্ধেক সম্পত্তির উত্তরাধিকার করা যেতে পারে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে। এসব প্রস্তাবনা পরবর্তী সময়ে সকলের মতামত গ্রহণ করে সংশোধন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এর আগে দিবাযত্ন কেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার তার বক্তব্যে শিশুদের জন্য নতুন বিষয়ে জানার জন্য আগ্রহোদ্দীপক পরিবেশ সৃষ্টিতে কেয়ার-গিভারদের অনুরোধ করেন। আর ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ভূমি ভবনে স্থাপিত শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শিশুদের পাশাপাশি সব পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি দফতরে কর্মরত কর্মজীবী নারীদের শিশুরা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান সোলেমান খান, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন, ‘২০টি শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক শবনম মোস্তারীসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও আওতাভুক্ত দফতর-সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ভূমি ভবনে স্থাপিত অত্যাধুনিক মডেল শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রটিতে শিশু নিরাপত্তার সবধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘ডে-কেয়ার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার’র মাধ্যমে অভিজ্ঞ কেয়ারগিভারদের মাধ্যমে কেয়ার সেন্টাররটি পরিচালনা করা হবে। মন্ত্রী আজ এই সফটওয়্যার সিস্টেমটিও উদ্বোধন করেন। কেন্দ্রটিতে আরও থাকছে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা ও সিসিটিভি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ভূমি ভবনে স্থাপিত প্রায় ৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের এ শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে ৬০টি শিশুকে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রাখার সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, সকাল-বিকেলের নাস্তা ও দুপুরের খাবার দেওয়া হবে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রটিতে রয়েছে শিশুদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুবিধা।

কর্মজীবী নারীরা যেন পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিন্তে এবং মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের বিভিন্ন সরকারি দফতরে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ‘২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পটি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

কর্মজীবী নারীদের ৪ মাস থেকে ৬ ছয় বছর বয়সী শিশুদের দিবাকালীন নিরাপদ সেবা প্রদান করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- শিশুর দিবাকালীন সাধারণ যত্ন নিশ্চিত, শিশুর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান এবং শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ