ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

১১ দফা নির্দেশনা কে তদারকি করবে?

প্রকাশনার সময়: ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:১৫

দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। এখন পর্যন্ত করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে শনাক্ত হয়েছেন ৩০ জন। আক্রান্ত সবাই ঢাকার বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এর মধ্যে বিশ্বে শুরু হয় ওমিক্রন তাণ্ডব। গত ৩ জানুয়ারি দেশে দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশ এবং ৫ জানুয়ারি তা ৪ শতাংশ ছাড়ায়। কিন্তু তার দুই দিনের মাথায়ই ৭ জানুয়ারি শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়।

এর দুই দিন পর ৯ জানুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১০ জানুয়ারি সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশে। পরদিন ১১ জানুয়ারি নতুন রোগী শনাক্ত হন দুই হাজার ৪৫৮ জন। এ সময়ে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশই ঢাকা জেলার। তবে ঢাকা বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও শনাক্ত বাড়ছে। এ দিন বিভাগের ফরিদপুর ও কিশোরগঞ্জে শনাক্ত হন ছয় জন করে, গাজীপুরে ১৬ জন, গোপালগঞ্জে সাত জন, মানিকগঞ্জে চার জন, মুন্সীগঞ্জে তিন জন, নারায়ণগঞ্জে ১১ জন, নরসিংদীতে পাঁচ জন এবং শরীয়তপুরে একজন। চট্টগ্রাম বিভাগেও রোগী বাড়ছে। সেখানে চট্টগ্রাম শহরেই কেবল এ সময়ে শনাক্ত হয়েছেন ২০৭ জন ও কক্সবাজারে ৪৭ জন।

করোনা সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বগতিতে সরকার গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা বাস্তবায়ন হবে আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে।

১১ দফার মধ্যে অন্যতম হলো, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা এবং রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে টিকার সনদ দেখানো। সেইসঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়।

এদিকে, সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ করার সুপারিশ করে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটি। কমিটির সভাপতি অধ্যাপড ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সব সামাজিক (বিয়ের অনুষ্ঠান, মেলা, ইত্যাদি), ধর্মীয় (ওয়াজ মাহফিল) ও রাজনৈতিক সমাবেশ এ সময় বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে জাতীয় কমিটি।’

সভাসমাবেশ বন্ধে জাতীয় কমিটি ও সরকার প্রজ্ঞাপন দিলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্য মেলা চলবে। এদিকে, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি জানিয়েছে, টিকার সনদ দেখিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার বিষয়ে সরকার যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সেটা অবাস্তব।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে দেশের করোনা সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আর বাণিজ্য মেলার মতো জায়গায় কখনোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব নয়। তারা বলছেন, বাণিজ্য মেলা চলছে, পিঠা উৎসব চলছে, রাজনৈতিক সমাবেশ চলছে, নির্বাচন চলছে- এটা স্পষ্টতই ১১ দফার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বাণিজ্য মেলার মতো জায়গায় কখনোই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান।

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মেলাকে আরও সফল করার জন্য, আরও জনসমাগম বাড়ানোর জন্য আয়োজন হচ্ছে, প্রচারণা হচ্ছে, এটা ১১ দফা নির্দেশনা এবং জাতীয় পরার্মশক কমিটির সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

১১ দফা দেওয়া হয়েছে মানুষকে প্রতিপালনের জন্য, কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রের ভেতরেই জনসমাগম হচ্ছে। এই সাংঘর্ষিক বিষয় করোনার শুরু থেকেই দেখে আসছি।’

করোনার টিকাদান কর্মসূচিতে সরকারের অনেক সফলতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রশাসনের শীথিলতা গতবারও দেখা গেছে, এবারও তাই হবে। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা তাই বলে।’

অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান জানান, যেকোনও জনসমাবেশ তো করোনার উৎপত্তিস্থল, এটা আমরা এতদিনে সবাই জানি। ওমিক্রণের সংক্রমণ গতি ডেল্টার তুলনায় পাঁচ থেকে ছয়গুন বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১১ দফা জারি এবং বর্তমানে দেশের মধ্যে যা চলছে, এটা সাংঘর্ষিক। ওমিক্রন, ডেল্টা তথা যেকোনও ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে ১১ দফার যদি বাস্তবায়ন না করা যায়, তাহলে ১১ দফা কাগজে কলমেই থাকবে, আর তাতে করে জাতি আবার ডেল্টার সময়ের মতো অবস্থাতে যাবে।’

জনস্বাস্থ্যবিদ এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সালের বক্তব্যও একই। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মেলা, বিভিন্ন জায়গায় পিঠা উৎসব, বিয়ে বাড়িতে উৎসব, পর্যটন কেন্দ্রসহ সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে কখনোই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। ১১ দফা যেটা দেওয়া হয়েছে, সেটা কেবলেই দেওয়ার জন্য দেওয়া। এটা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, কে বাস্তবায়িত করবে, কে তদারকি করবে—তার কোনও নির্দেশনা নেই। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয় না। এটা কাগজে লেখা, লেখাই থাকবে আর কিছু হবে না।’

‘১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য একটা সমন্বিত, সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার, যেটা আগেও হয়নি, এখনও হবে না’, বলেন আবু জামিল ফয়সাল। ‘১১ দফায় বলা হয়েছে, মাস্ক পরা আবশ্যক। কিন্তু জনমানুষের সম্পৃক্ততা না থাকলে একে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’ বলেন আবু জামিল ফয়সাল।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ