ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কি আছে ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে?

প্রকাশনার সময়: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:৪৩

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে কুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। কুয়েটের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার সেকশন অফিসার মো. রবিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত কমিটির সভাপতি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, সদস্য গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আলহাজ উদ্দিন, সদস্য কুয়েটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মাহবুব, বহি:সদস্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) শাহাবুদ্দীন আহমেদ, খুলনা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ বসাক ভাইস-চ্যান্সেলরের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

৪৮ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে ১৩টি সংযুক্তি রয়েছে- উল্লেখ করলেও প্রতিবেদনে কি আছে- সেটি বলতে পারেননি পিআরও রবিউল ইসলাম। তবে প্রতিবেদনে ঘটনার সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরে বেশ কিছু সুপারিশ বা প্রস্তাব করা হয়েছে- বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ধারণা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে পরে সিন্ডিকেট সভায় সেটি উত্থাপন করে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক কুয়েটের প্রফেসর ড. মহিউদ্দিন আহমাদ বলেন, মঙ্গলবার তদন্ত রিপোর্ট বিশ্ববিবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত কার্যক্রম করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে, ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য ৩০ নভেম্বর ড. মো. সেলিমের দাপ্তরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানুষিক নির্যাতন করে। সাধারণ সম্পাদকসহ উপস্থিত ছাত্ররা হলের প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে বেশ কয়েকদিন ধরে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা হতে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। পরে দুপুর ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন।

শিক্ষকের মৃত্যুর দিন রাতে এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম। এছাড়া দুজন সদস্য ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক কল্যাণ কুমার হালদার। তাদের মধ্যে কল্যাণ কুমার হালদার লিখিতভাবে এবং মো. আরিফুল ইসলাম মৌখিকভাবে তদন্ত করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ৫ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ ঘটনায় গত ৪ নভেম্বর ছাত্র শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি ভঙ্গ করার দায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর ড. সেলিমের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাঁশগ্রাম কবরস্থান থেকে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতের তত্ত্বাবধানে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে তার মরদেহ বাঁশগ্রামে পুনরায় দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে ৩ ডিসেম্বর দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে বন্ধের মেয়াদ ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২৩ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ৭৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জানানো হয়, কুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি থেকে চালু হবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ জানুয়ারি আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, শিক্ষকের ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনও আসেনি। সময় লাগবে। মামলার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা আসেনি।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আমরা স্যারের মৃত্যুর পর ৫টি দাবি করেছিলাম। তার মধ্যে প্রথম দাবি ছিল সন্দেহজনকভাবে জড়িতদের সাময়িক বহিস্কার করা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এরপর শিক্ষক সমিতি সাধারণ সভার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সকল দায়-দেনার বাইরে শিক্ষকের পরিবারকে ১ কোটি টাকার আর্থিক সহযোগীতা করা, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত পূর্বক ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা। পাশাপাশি স্থায়ী বহিস্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা এবং সর্বশেষ দাবি ছিল শিক্ষক মৃত্যুর বিষয়টি আইনিভাবে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ