একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু দেশের সাহিত্যাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি বলে তারা শোকবার্তায় উল্লেখ করেন।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক পৃথক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক জানান। এদিন রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর চৌদ্দপাই এলাকার ‘বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটিতে (বিহাস)’ নিজ বাসা ‘উজান’-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নন্দিত সাহিত্যিক।
হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, হাসান আজিজুল হকের মৃত্যু দেশের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উন্নয়নে হাসান আজিজুল হকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হাসান আজিজুল হক তার সাহিত্যকর্ম ও সৃজনশীলতার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হাসান আজিজুল হকের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই হাসান আজিজুল হকের হৃদযন্ত্রে সমস্যা ছিল, ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত ছিলেন। জুলাই মাসে বাথরুমে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছিলেন কোমরে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে তাকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে গত ২১ আগস্ট তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়।
ঢাকায় চিকিৎসা শেষে ৯ সেপ্টেম্বর তাকে ফের রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়ার পরও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আর শরীরের সঙ্গে পেরে উঠলেন না ৮২ বছর বয়সী এই চিরতরুণ। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় অনন্য এক মানে পৌঁছে যাওয়া হাসান আজিজুল হক ঠাঁই নেন অনন্তলোকে।
হাসান আজিজুল হকের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন বর্ধমানেই। খুলনার ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ) থেকে পেরোন উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার পর বেশ কয়েকটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭৩ সালে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে।
২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েই। অধ্যাপনার পর অবসরেও ঢাকার নাগরিকতায় মানিয়ে নিতে আসেননি। নিভৃতেই পাঠক-ভক্ত-শিক্ষার্থী-সহকর্মীদের ভালোবাসা নিয়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থেকে গেছেন রাজশাহী শহরেই।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ