স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকজয়ী নন্দিত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের নামাজে জানাজা মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর জানাজা শেষে স্ত্রী শামসুন নাহারের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম টিপু সোমবার (১৫ নেভেম্বর) রাতে জানান, আগামীকাল শহীদ মিনারে তার (হাসান আজিজুল হকের) মরদেহে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। বাদ জোহর রাবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোরস্থানে তার স্ত্রীর কবরের পাশে দাফন করা হবে।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক রাজশাহীর বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসান আজিজুল হক দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে গত ২১ আগস্ট রাজশাহী থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়া হয়। প্রথমে তাকে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্থানান্তর করা হয়।
প্রায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজশাহীর বাসভবন ‘উজান’-এ ফিরেছিলেন হাসান আজিজুল হক।
মৃত্যুকালে তিনি তিন মেয়ে এবং এক ছেলে রেখে গেছেন। তার ছেলে ইমতিয়াজ হাসান মৌলি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী সিটি কলেজ, সিরাজগঞ্জ কলেজ, খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ এবং সরকারি ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন এই সাহিত্যিক।
২০০৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে মনোনীত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের আগস্টে হাসান আজিজুল হক বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হন।
আগুনপাখি (উপন্যাস), আত্মজা ও একটি করবী গাছ (গল্পগ্রন্থ), একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথাসহ (প্রবন্ধ) অসংখ্য জনপ্রিয় বইয়ের লেখক এ সাহিত্যিক বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে এবং ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
এই অসামান্য গদ্যশিল্পী তার সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি লাভ করেন।
নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক সর্বশেষ প্রকাশিত লেখা ' মাটির বাড়ি, যতদিন চন্দ্র সূর্য'। এই লেখাটা ছিলো তার জন্মস্থানের নিজ মাটির বাড়িকে নিয়ে। এটি একটি উপন্যাস। নিজেদের মাটির বাড়িটি কিভাবে তৈরি হয়েছিল সেটির গল্প মূলত এই লেখায় স্থান পেয়েছে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ