বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতি শুধু সত্যকে বিকৃত করে না বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থী বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতির জবাবে এ মন্তব্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি বিষয়ে আজ (২৬ নভেম্বর ২০২৪) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি বিবৃতিতে সরকারের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। অত্যন্ত হতাশা ও অত্যান্ত পরিতাপের সাথে বাংলাদেশ সরকার লক্ষ্য করছে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর থেকে একটি মহল ভুল ধারণা পোষণ করছে। এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু সত্যকে বিকৃত করে না বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থী।’
‘বিবৃতিটি সকল ধর্মের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্প্রীতি এবং এই বিষয়ে সরকার ও জনগণের প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে না। সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি চূড়ান্তভাবে শেষ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, একইভাবে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘুদের সমান হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। কিন্তু ওই বিবৃতিটির মাধ্যমে তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।’
‘বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করে যে, প্রত্যেক বাংলাদেশি তার ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন, প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা বা বাধা ছাড়াই মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। সকল নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের একটি দায়িত্ব। গত মাসে সারা বাংলাদেশে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে পালনের মাধ্যমে এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সরকার বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। বিতর্কিত বিষয় বর্তমান আইন আদালত দ্বারা মোকাবেলা করা হচ্ছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারও দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ বিকেলে চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যে কোনো মূল্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে বন্দর নগরীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে সরকার।’
এর আগে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এক বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিল্লির ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার এবং জামিন আবেদন নাকচ করায় ভারত উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার পর এ ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং দেবতার অবমাননা ও মন্দিরে চুরি-ভাঙচুরের একাধিক ঘটনা রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘আমরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার বিষয়টিও উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এসব হামলার পেছনে যারা জড়িত, তাদের বড় অংশকেই বাদ দিয়ে; ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। শেষে হিন্দু এবং সব সংখ্যালঘুদের সমাবেশ করার ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করাসহ তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ