রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী এলাকায় অনলাইন গ্রুপের মালিক খান মো. আক্তারুজ্জামানের কবলে পড়ে পৈতৃক ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার। প্রতিবাদ করায় হয়রানি ও মিথ্যা মামলার কবলে পড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকেই।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর ) দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বপ্না আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, তদবিরবাজ, প্রতারক, জালিয়াতিসহ ওই এলাকার সর্বত্র ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে আক্তারুজ্জামান। কেউ জমি বিক্রি করতে চাইলে তিনি নামমূল্যে ভুয়া চেক দিয়ে জমি বায়না করে দখল করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
তিনি আরও বলেন, তার সম্পত্তি জবরদখল করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথমে র্যাব দিয়ে তার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফিল্মি স্টাইলে ঢাকায় তুলে নিয়ে আসে এবং বিভিন্ন মাদক ও জাল টাকা দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে জেলে পাঠায়। দীর্ঘ কারা ভোগের পরে জামিনে মুক্ত হন এবং আদালত থেকে ওই মামলায় খালাস প্রাপ্ত হন এবং আদালত ওই র্যাবদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন।
তা ছাড়া সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা অবরোধ করে রাখা ও ইসিবি চত্বরে তার কথার বাইরে কাউকে ব্যবসা করতে না দেওয়া হয় না। নানাভাবে ওই এলাকার অর্ধশত পরিবারের অন্তত পঞ্চাশ একর জমি দখল করে নিয়েছে। গত শনিবার ইসিবি চত্বরে আক্তারুজ্জামান তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্য এলোপাতাড়ি হামলা চালায়, এতে দুই পা হারিয়ে তিনি এখন পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
মানিকদী এলাকার একটি শহীদ পরিবারকে রাতের অন্ধকারে তার বসতবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়িটি দখলে নেয় বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবার।
আরেক ভুক্তভোগী নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিমানের সাবেক এমডি ও সিভিল এভিয়েশনপর সাবেক চেয়ারম্যান গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. সওকাত উল ইসলাম বলেন, তার ক্রয়কৃত ১৩ কাটা জমির ৮ কাটা জমি তার দখলে রয়েছে আক্তারুজ্জামান। সেই জমি দখলের জন্য বিভিন্নভাবে তাকে হয়রানি করে আসছে। গত কয়েকদিন আগে তার বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করতে গেলে ঘটনার সত্যতা না থাকায় থানা পুলিশ মামলাটি নিতে না চাইলে আক্তারুজ্জামান আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ আক্তারুজ্জামানের বিচারের দাবি জানান।
আরেক ভুক্তভোগী বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদুর রহমান রাসেল গংদের ৮ কাঠা জমি আক্তারুজ্জামান বাহিনী জবরদখল করে রাখেন। মানিকদী, মাটিকাটা এলাকায় এমন শতাধিক পরিবার আক্তারুজ্জামানের নির্যাতনের শিকার বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন।
প্রয়াত স্বরাষ্টমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আত্মীয় মো. আইয়ুব আলী গংদের ইসিবি চত্বরে প্রায় ২ একর সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টাকালে আক্তারুজ্জামানকে বাধা দিয়ে পরবর্তীতে তাকে গুম করে মেরে মৃত প্রায় অবস্থায় নির্জন জঙ্গলে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তাদের সম্পত্তি জবরদখল করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করে। আইয়ূব আলী সে দফায় প্রাণে বাঁচলেও বর্তমানে পঙ্গুত্র বরণ করছে বলে জানান তার পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে শতশত অভিযোগ ও একাধিক মামলা থাকার পরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ প্রশাসনের বিশাল একটি সিন্ডিকেট এসকল জবর দখলের সাথে জড়িত ছিলো।
সংবাদ সম্মেলন বর্তমান অন্তর্বতী সরকার ও প্রশাসনের কাছে ভুক্তভগী পরিবারগুলো তাদের সম্পত্তি ফেরত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহণের দাবি জানান।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ