ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থপাচারে ডিপিডিসি কর্মকর্তা!

প্রকাশনার সময়: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৪

ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতি করে গড়ে তুলেছেন অর্থ-সম্পদের পাহাড়। দফায় দফায় বাড়িয়েছেন চাকরির (চুক্তিভিত্তিক) মেয়াদ। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সংস্থার অর্থ ব্যক্তিস্বার্থে ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন ব্যাংকে। সংস্থার শীর্ষ পদে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বে থেকে করেছেন অসংখ্য নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য। কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গড়ে তুলেছেন বিত্ত-বৈভব আর একাধিক আলীশান বাড়ি। পাশাপাশি এরমধ্যেই দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছেন বিশাল অঙ্কের অর্থ। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে করেছেন বিদেশ সফর। এমনটাই অভিযোগ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (ডিপিডিসি) নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে।

শেখ সালাম নামের এক গণমাধ্যমকর্মীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নানা ফন্দি ফিকিরে নিজ সংস্থায় মাঝে মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত এমডি, কখনো পরিচালক (প্রশাসন) আবার কখনো পরিচালক (আইসিটি)-এর পদ। আর এসব পদের দায়িত্বে থাকাকালে ফাঁক ফোকরে করেছেন অসংখ্য নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতী বাণিজ্য। আর কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তা ছাড়া নিজের ছেলের পদোন্নতীর চুক্তিতে ডিপিডিসির বিশাল অঙ্কের অর্থ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি বেসরকারি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) গোলাম মোস্তফা। আবার সংস্থায় সিকিউরিটি নিয়োগকালে ঘুষের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) গোলাম মোস্তফার সাথে নিজ সিন্ডিকেটের লোকজনের সাথে দ্বন্দ চরম আকার ধারণ করলে তৎকালীন ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ফয়সালা হয়।

চলতি বছরের শুরুতে (১১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্বে থাকাকালে তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।

রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় বহুতল বিশিষ্ট ৩টি বাড়ি, স্ত্রীর নামে পূর্বাচলে ৫ কাঠার প্লট, যমুনা ফিউচার পার্কে ৫টি দোকান সহ নিজ জেলা কুমিল্লায় নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। এর মধ্যে বনশ্রীর জে ব্লকের ৬ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িটিতে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, অসৎ উপায়ে কোনো কর্মকর্তা অর্থ সম্পদ উপার্জন করলে আবশ্যই তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাতে বিন্দুমাত্র ছাড় পাবে না।

এ ব্যাপারে ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এদিকে ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সচিব মাসুদা খাতুন স্বাক্ষরিত এক আদেশে অভিযোগের বিষয় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দেয়া হয়। যার স্মারক নম্বর: ২৭.০০.০০০০.০৮৮.২৭.০০১.২১.৫৫০, তারিখ: ২৮/০৭/২০২৪ ইং।

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাংলাদেশকে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হতো না এবং দেশে রিজার্ভ সংকটও থাকত না। আমরা অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনস্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হওয়ার কথা আরো একবার স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।’

অর্থ পাচার প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা খর্ব করার সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত অনেকগুলো অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদকের এখতিয়ার থেকে সরিয়ে নেয়ার ফলে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে দুদক তার প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

অবৈধভাবে পাচার হওয়া টাকা ফিরে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে অনেক সময়ই অর্থ পাচারের ঘটনা উন্মোচন হলেও জড়িত ব্যক্তিরা পরিচয় ও অবস্থানের বলে পার পেয়ে যান। বিত্তশালী, রাজনৈতিক আনুকল্য বা অন্যভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না, যা হতাশাজনক। যাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ, তাদের ক্ষেত্রে এর পুনরাবৃত্তি হবে না, দেশবাসীর এই প্রত্যাশা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লার চাঁনপুর গ্রামের মরহুম মুছা মিয়া ও মোসা. ওয়াহিদুননেছার সন্তান মো. গোলাম মোস্তফা। তিনি সাঈফ মোস্তফা ও মো. সাঈদ মোস্তফা নামের দুই পুত্র সন্তানের বাবা।

গোলাম মোস্তফা প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৯৫ সালের ১ জুন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের মাধ্যমে। এরপর তিনি আরও অন্তত ৪টি সংস্থায় চাকরি শেষে ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট ডিপিডিসিতে চলমান পদে যোগদান করেন। ডিপিডিসিতে তার কর্মজীবনে তিনি ২২ বার বিদেশ সফর করেছেন। আর এসব সফরের আড়ালে তিনি অর্থ পাচার করেছেন বলে অনেকেরই ধারণা। দফায় দফায় তিনি বৃদ্ধি করিয়েছেন চাকরির মেয়াদ। সর্বশেষ ১/১০/২০২৩ থেকে ০৯/১০/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। যার স্মারক নম্বর: ২৭.৮৭.০০০০.৪০৪.১১.০০৩.২০.১৬৫৯।

বৃদ্ধিকৃত এই মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে হওয়ায় এর মধ্যে তিনি আবারও চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ