ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালু করলো ডিএনসিসি

প্রকাশনার সময়: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৭:৩১ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৭:৩৭

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, 'প্রায়ই দেখা যায় আট থেকে দশ জন শিক্ষার্থী ভ্যানে করে স্কুলে যাওয়া আসা করে। অনেক স্কুলে মাইক্রোবাসে করেও যাওয়া আসা করতে দেখা যায়। এই ধরনের ভ্যান ও মাইক্রোবাসগুলো অনেকটা অনিরাপদ। ঝুঁকি নিয়ে আমাদের বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছি। পরীক্ষামূলকভাবে বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনটি বাস দিয়ে এটি শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্কুলগুলোতে এই স্কুল বাস সার্ভিস চালু করা হবে। স্কুল বাস সার্ভিস শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।'

বুধবার (৩ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেয়র এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শিক্ষায় যে বিনিয়োগ করছেন, তার সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন যোগ হলে তখন ভিন্নমাত্রা পায়। এই স্কুল বাস সার্ভিস চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু করেছে। আমরা অনুরোধ করবো বাস সার্ভিসটি শুধু স্কুল ভিত্তিক না করে, এলাকা ভিত্তিক কোনো রুট পরিচালিত করা যায় কিনা। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে বাস দেয়া কতটা সম্ভব হবে জানিনা। তবে বাস শেয়ারিংটা যেনো হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাস সার্ভিসের সুবিধা পেলে সিটি কর্পোরেশনের কষ্ট সার্থক হবে।

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, 'শুধু সরকারি ও আধা সরকারি স্কুল নয় বরং যে বিদ্যালয় বেশি নিজস্ব গাড়িতে চড়ে শিক্ষার্থীরা আসে সেই স্কুলগুলোকে মার্ক করতে হবে। গাড়ির বাস্তব ব্যবহার বোঝাতে হবে। গাড়ি যে কোনো ধরণের হতে হবে। পয়সা থাকেলই দামি গাড়ীতে করে বাচ্চাদের স্কুলে আনতে হবে এমন মনোভাব থেকে অভিভাবকের বেরিয়ে আসতে হবে। স্কুলের পথ পায়ে হাঁটা হলে হেঁটেই স্কুল আসার অভ্যাস করাতে হবে বাচ্চাদের। সন্তানকে যেভাবে গড়া হবে তারা তেমনি বেড়ে উঠবে। তাই আমাদের সন্তানদের ভোগবাদী মানসিকতা থেকে দূরে রাখতে হবে।'

সভাপতির বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, 'সন্তানরাই বাবা-মায়ের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট স্কুল বাসগুলোয় সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্র্যাকিং ব্যবস্থাও থাকবে। একটি হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে অভিভাবকেরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন। প্রতিটি বাসে নিবেদিত ট্রিপ ম্যানেজার থাকবে। পরীক্ষামূলক চালু করেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

মেয়র বলেন, 'প্রাথমিকভাবে ডিএনসিসির স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিসে বিদ্যানিকেতন স্কুলের ৪৬০ জন শিক্ষার্থী এরমধ্যে পাওয়া গেছে। স্কুলটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আগামী জানুয়ারিতে তিন হাজার শিক্ষার্থী স্কুল বাস সার্ভিসের আওতায় আসবে। এজন্য ২০টি বাস প্রয়োজন হবে। যেখানে অনেকগুলো যানবাহনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যাওয়া আসা করতো সেখানে ২০টি বাসের মাধ্যমে সার্ভিসটি দেওয়া সম্ভব হবে। এর ফলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কম হবে, পরিবেশ দূষণ কমবে। অন্যান্য স্কুলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানাবো এই বাস সার্ভিসের সুবিধার আওতায় আসার। আমারা নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রামে লন্ডনে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখে এসেছি কিভাবে এই সার্ভিসটি চলছে আমরাও প্রক্রিয়াটিও সেভাবে করতে চাই। অভিভাবকদের সহায়তা চাই। কোনো সমস্যা সামনে আসলে সেটাও সমাধান করা হবে।'

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দীর্ঘ সময় ধরে এই স্কুল বাস সার্ভিস চালুর জন্য কাজ করতে হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বনানী এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। আমরা প্রাথমিকভাবে বনানী এলাকায় তাই সার্ভিসটি শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি৷ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছি। স্কুল বাসের সুবিধা সম্পর্কে বুঝিয়েছি। বিদ্যানিকেতন স্কুলে কার্যক্রমটি শুরু করতে পেরেছি। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসহ অন্যান্য সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুলকে আহ্বান করছি বাস সার্ভিসের আওতায় আসার জন্য। স্কুলগুলোর প্রতি শিক্ষা মন্ত্রীও এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।'

স্কুল বাস সার্ভিসটি পরিচালনা করতে শিক্ষার্থীদের যেন বেশি ব্যয় না হয় সেজন্য ডিএনসিসি থেকে একটি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান মেয়র।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা, হাছিনা বারী চৌধুরী ও খালেদা বাহার বিউটি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।

আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ডিএনসিসির ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, অন্যান্য কাউন্সিলর এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ