ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

মাংস ও মসলার দাম চড়া, আরও বাড়ার আগেই কিনছেন ক্রেতারা

প্রকাশনার সময়: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২১:১২ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২১:১৮

রমজানের দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চালসহ বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, আটা, ময়দা, ডাল, ছোলা, আদা ও রসুনসহ আরও বেশ কিছুর দাম। ঈদের আগে আগে মাংসের বাজার আরও ঊর্ধ্বমুখী। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না সাধারণ ক্রেতাদের। রোজা শুরুর আগেও যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ২১৫ টাকা বা তার আশপাশে, আজ তা আড়াইশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানের আগে যে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিলো, আজ তা ৭৮০ টাকা।

দাম বাড়লেও ঈদের জন্য এখনই মাংস কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের শঙ্কা, ঈদের আগে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। বিক্রেতারাও বলছেন, চাহিদার ওপর মাংসের দাম বাড়া-কমা নির্ভর করছে।

ঈদের আগে কেবল মাংসের দাম বেড়েছে এমনটা নয়। বেড়েছে আলু, আদা, রসুন, এলাচ, কাজুবাদাম, জয়ত্রীর মতো পণ্যের দামও।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর ১১ ও ১৩ নম্বরের কাঁচা বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ঈদের আগে মানুষের কেনাকাটার এই চিত্র।

সরকার গরুর মাংসের কেজি ৬৬৪ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির মাংস ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু এই নির্দেশের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই বাজারে নিয়মিতই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাংস। দেশি মুরগি, কক ও লেয়ার মুরগির মাংসও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এতে করে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। তবুও চাপ উপেক্ষা করেই আসন্ন ঈদের কেনাকাটা করছেন তারা। কারণ শঙ্কা আছে, দুই-এক দিনে এই দামও না আরও বেড়ে যায়।

রমজানের আগে শেষ শুক্রবার, গত ৮ মার্চ ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিলো ২১৫ থেকে ২২৫ টাকা কেজিতে, কক মুরগি ৩১৫-৩২৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০/ ৬৮০ টাকায়।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২৩৫ থেকে ২৫০ টাকা, কক মুরগি ৩৩০-৩৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৩৫ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার দেড় কেজির বেশি ওজনের মুরগির গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০২ টাকা কেজি দরে, যা আজ বিক্রি হয় ২৩৫ টাকায়।

গরুর মাংস ৭৬০-৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, কক মুরগির দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম ১৫ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে।

বাজার করতে আসা মো. আজিজ বলেন, ব্রয়লার মুরগির কেজি আড়াইশো টাকা, এটা ভাবা যায়? তবুও কষ্ট করে কিনে নিয়েছি। কাল সকালে যে ৩০০ টাকা হবে না তার তো কোনো গ্যারান্টি নাই।

আরেক ক্রেতা ইয়াসিন বলেন, শুধু ঈদ দেখেই এত দাম দিয়ে মুরগির মাংস কিনলাম। তা না হলে কিনতামই না। যে ভাব দেখছি, মনে হচ্ছে মাংসের দাম আরও বাড়বে।

এসময় আরেক ক্রেতা কিছুটা আক্ষেপের সঙ্গে পরিহাস করে বলেন, দেশি মুরগির মাংসের দাম তো আরেকটু হলে গরুর মাংসের দামের কাছেই চলে যাবে!

দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আল-আমিন চিকেন হাউজ নামে একটি দোকানের বিক্রেতা শামসু কঠোরভাবে বলেন, দাম কেন বাড়ছে জানি না। তবে আরও বাড়বে।

দাম আরও বাড়বে কিনা জানতে চাইলে সেলিম বলেন, বিক্রি যদি বেশি হয় দাম আরও বাড়বে। আর যদি বিক্রি কম হয় তাহলে দাম আরও কমে যাবে। তবে এখন পর্যন্ত বেচাকেনা ভালোই চলছে।

আজ মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৫০- ৬০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪৫ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৪০-১৬০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, মিয়ানমারের আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। আর বড় সাইজের দেশি রসুনের দাম আবার বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া আলুর দাম ৫ টাকা ও মিয়ানমারের আদার দাম ২০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে।

আলু পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. শরীফ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসায় পেঁয়াজের দাম কমে গিয়েছে। তবে আলু, রসুনের দাম আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।

ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের মসলার বাজার। আজ বাজারে এলাচ ৩২৫০ টাকা, দারুচিনি ৫৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, জিরা ৭০০ টাকা, জয়ফল ১২৫০ টাকা, জয়ত্রী ৩৬০০ টাকা, আলুবোখারা ৪৮০ টাকা, কিসমিস ৫৫০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৯৫০ টাকা, কাজুবাদাম ১২৫০ টাকা, কাঠবাদাম ১০৮০ টাকা, চিনা বাদাম ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এর মধ্যে এলাচ গত সপ্তাহে ২৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। এছাড়াও জয়ত্রী বিক্রি হয়েছে ৩৪০০ টাকা ও কাজু বাদাম বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকায়। এক সপ্তাহে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০০ ও ৫০ টাকা।

এদিকে আজ মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজ প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০- ১৪০ টাকা, ছোট মুসরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেশারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও প্রায় সব মুদি দোকানেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের প্যাকেটজাত ও খোলা সেমাই, নুডুলস, ম্যাকারনি। মানভেদে ৫০০ গ্রামের প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই ১৫০- ৬০০ টাকা, খোলা সাদা লাচ্ছা সেমাই ১৫০ টাকা, খোলা ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই ২০০ টাকা, খোলা রঙিন লাচ্ছা সেমাই ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্যাকেটজাত বার্মি চিলি সেমাই (লম্বা সেমাই) ৪৫ টাকা, খোলা বার্মি চিলি সেমাই ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে বিভিন্ন নুডলস ৫০-১৫০ টাকা, ম্যাকারনি ৮০- ৩০০ টাকা প্রতি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের কেনাকাটা নিয়ে সেলিম জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, এখনও হাতে সময় আছে বলে মানুষ সেমাই বা মসলা জাতীয় জিনিস এখনও কিনছে না। তবে কয়েকদিন পরেই এসব পণ্য কিনবে। এখন পর্যন্ত মানুষ মাছ, মাংস বা দুধ এ ধরনের পণ্যই বেশি কিনছে।

এদিকে আজ বাজারে প্রায় সব সবজির দামই রয়েছে নিম্নমুখী। আজকের বাজারে শিম ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৬০ টাকা, চেরি টমেটো ২০০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৫০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৪০-৯০ টাকা, ক্ষিরাই ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, সজনে ১২০ টাকা, কচুরমুখী ১৫০, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে।

সবজি বিক্রেতারা বলছেন ঝড়- বৃষ্টি না হলে সবজির দাম আরও কমে যাবে। তবে বৃষ্টি হলেই বাড়বে সবজির দাম।

এছাড়া আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৩০০- ১৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪৫০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০- ৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ -১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০- ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ