একের পর এক মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পর সরকার পুরান ঢাকা থেকে প্রায় ২,০০০ রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরের উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত সামান্য অগ্রগতি হয়নি, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করেছে। সমস্যাটির একটি অস্থায়ী সমাধান প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি স্থায়ী কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করার কথা থাকলেও সেটি প্রাথমিক পর্যায়েই রয়ে গেছে।
সরকার রাসায়নিক গুদামগুলো অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য শ্যামপুরে মাত্র ৫৪টি গুদাম স্থাপন করেছিল, তবে ব্যবসায়ীরা সেগুলো ভাড়া দিতে আগ্রহী না হওয়ায় একটিও রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর করতে পারেনি। ২০১০ সালে নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২৪ জনের প্রাণহানির পর সরকার পুরান ঢাকা থেকে বিপজ্জনক রাসায়নিক ডিপো ও প্লাস্টিক কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। নয় বছর পর ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ, আরেকটি ট্র্যাজেডি এ এলাকায় আঘাত হানে। চকবাজারের ওয়াহেদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন লোক মারা যায়, যেটির নিচতলায় একটি রাসায়নিক গুদাম ছিল। সরকার ২০১৮ সালে রাজধানীর উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জে একটি কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন করে এবং চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের পর কেরানীগঞ্জের পরিবর্তে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার ঢাকার শ্যামপুর এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে অস্থায়ী গুদাম নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পও অনুমোদন করে যা ২০২০ সালে কাজ শুরু হয়।
টঙ্গীর শ্যামপুরে অস্থায়ী গুদাম: দুটি অবস্থানের মধ্যে, বুড়িগঙ্গা ইকো পার্কের কাছে শ্যামপুরে ৫৪টি গুদামের কাজ ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়েছে এবং সেগুলো ২০২৩ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শ্যামপুর কেমিক্যাল গুদাম পরিদর্শনকালে দেখা যায় যেসব নবনির্মিত গুদাম এবং অফিস ভবনগুলো খালি রয়েছে কারণ ব্যবসায়ীরা সেগুলো ভাড়া দিতে আগ্রহী নয়।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মহাব্যবস্থাপক (এস্টেট ম্যানেজমেন্ট) নজরুল ইসলাম বলেন, শ্যামপুরে মোট ৫৪টি গুদাম, প্রতিটি ১,৪৪৪ বর্গফুট এবং দুটি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় এখনো ৫৩টি গুদাম নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্প পরিচালক খন্দকার জহিরুল হক বলেন, ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৪ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘আমরা ৫৩টি গুদাম তৈরির কাজ শেষ করেছি যার প্রতিটিতে ১,২২৫ বর্গফুট এবং একটি তিনতলা অফিস বিল্ডিং রয়েছে। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব।’
সিরাজদিখানে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক: সরকার ৩০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে রাসায়নিক গুদামের জন্য ২,২৯০টি শিল্প প্লট নির্মাণের জন্য ১,৬১৫.৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সীগঞ্জ প্রকল্প অনুমোদন করে। এরপর থেকে প্রকল্পটি দুবার সংশোধিত হলেও বিসিক ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ করতে পারেনি, প্লট প্রস্তুত করাই ছেড়ে দেয়। বিসিকের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) আলমগীর হোসেন বলেন, চলতি বছরের জুনের মধ্যে বাউন্ডারি নির্মাণ ও মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, একটি অফিস ভবন ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। তবে শিল্প প্লটের কাজ কবে শেষ হবে এবং কবে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সেখানে স্থানান্তর করা হবে তা তিনি বলতে পারেননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরান ঢাকায় প্রায় ১ হাজার ৯২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ডিপো ও কারখানা থাকা অবস্থায় মাত্র ৫৪টি রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরের ব্যবস্থা খুবই হতাশাজনক। আলাপকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি ইকবাল হাবিব বলেন, গুদাম স্থানান্তরের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার অবহেলার কারণেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, কাজে ধীরগতির একটি কারণ হতে পারে বিসিককে সহযোগিতা করতে রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের অনিচ্ছা। বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, এ কারণে তারা এগোতে পারেননি।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ