ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১, ১৬ রজব ১৪৪৬

‘ওরা আমাদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখছে’

জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি জাহাজ
প্রকাশনার সময়: ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪২

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা নাবিকদের উপর নির্যাতন করেনি। তবে অস্ত্রের মুখে দস্যুদের কথা মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। অপহরণের শিকার জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন, নাবিকদের সামনে দিয়ে দস্যুরা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আশপাশে নেভি জাহাজ দেখলেই ওরা মাথায় অস্ত্র ঠেকাচ্ছে।

মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা আমাদের জিম্মি করে রাখছে। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেলে পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় তিনি এ তথ্য জানান। অডিও বার্তায় আতিকুল্লাহ খান বলেন, আমি যেখানে ঘুমাই সেখানে পাশ ফিরলেই দেখতে পাই আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে। এই অবস্থায় ঘুম যা হওয়ার তাই হচ্ছে। মানসিকভাবে চাপে থাকলেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি।

জাহাজে থাকা খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখনো খাবার আছে। কিন্তু, যেহেতু জলদস্যুরাও আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে, আমাদের খাবার আর কতদিন যাবে সেটা বলতে পারছি না। আর হয়তো ১০-১৫ দিন যেতে পারে। এরপর খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পরে যাব।

এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছানোর পর ক্রু সদস্যদের সঙ্গে জলদস্যুদের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে জানিয়ে অডিও বার্তায় তিনি বলেন, আজকে (বৃহস্পতিবার) আমরা সোমালিয়া এলাম। ওদের সঙ্গে আমাদের একটু ভালো রিলেশন (সম্পর্ক) হয়েছে। ওদের বলে কয়ে আমরা একটু কেবিনে এলাম। কিন্তু আবার ব্রিজে চলে যেতে হবে।

তিনি বলেন, মানসিকভাবে আল্লাহ যে কদিন ভালো রাখেন আরকি। তোমরাও ভালো থেকো। সবাইকে দোয়া করতে বলো, আমরা যেন নিরাপদে আসতে পারি। আল্লাহ যেন আমাদের সময়টা সহজ করে দেন, রোজার উসিলায়। এদিকে জাহাজটিতে অন্তত ২০ জন সশস্ত্র সোমালি জলদস্যু রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি কোম্পানি।

বাংলাদেশ সময় (১২ মার্চ) দুপুরে শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও।

এর আগে ওই জাহাজের আরেক নাবিক পরিবারকে জানায়, বৃহস্পতিবার সোমালিয়ান সময় দুপুর ১টার দিকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র দায়িত্ব নিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুদের অন্য একটি দল। নতুন জলদস্যুদের হস্তান্তরের পর ৫০ সদস্যের দলটি জাহাজ ছেড়ে গেছে।

এদিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি কেএসআরএমের মালিকানাধীন জাহাজটি এখন নোঙর করা অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘সঠিক জায়গার নাম বলা যাবে না। এটা হচ্ছে ওদের সি এরিয়াতে, যেটা দেখা যাচ্ছে তাদের উপকূলের ২০ মাইল দূরে। এখন জাহাজটি চলছে না, নোঙর করা অবস্থায় আছে।’

কেএসআরএমের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জলদস্যুদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। জাহাজের নাবিকেরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জলদস্যুরা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করেনি। তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় আমরা সেই চেষ্টা করছি। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।’

এর আগে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে উদ্ধার করতে বুধবার রাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিজস্ব নেভির একটি জাহাজ তাদের পিছু নিয়েছে বলে জানা গেছে। জলদস্যু ও ইইউর জাহাজে থাকা নৌ-সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময়ও হয়। একপর্যায়ে জিম্মি বাংলাদেশিদের হত্যার হুমকি দেয় জলদস্যুরা। এরপর কোনো উপায় না থাকায় পিছু হটে ইইউ নেভির জাহাজটি।

সোমালিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ মার্চ) রাত থেকে এখন পর্যন্ত ইইউ নেভির জাহাজটি তাদের অনুসরণ করে যাচ্ছে। কিন্তু জলদস্যুদের অনড় অবস্থানের কারণে জিম্মি থাকা ২৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজকে অনুসরণ করে যাচ্ছে ইইউর জাহাজটি। ইতোমধ্যে সোমালিয়া জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমান্তে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশি জাহাজটি।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ