বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লা’র ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছেন। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়ে।
এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ খান জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। সেই অডিও বার্তায় তিনি জলদস্যুদের আক্রমণের বর্ণনা দেন।
জাহাজে থাকা নাবিক ও ক্রুরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনি ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিসিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্ম শ্মসুদ্দিন, মো . আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খান বলেন, জাহাজে তখন সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টা)। ওই সময় একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন তখন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা চলে এল। তারা ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি।
অডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন চলে এল। এভাবে ১৫-২০ জন এল জাহাজটিতে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল এল। ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। এখন ওই মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে দেবে। তবে সেটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এখন আমাদের থেকে ডিজেল নিচ্ছে। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন।
অডিও বার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটে পাঠানো ভয়েস মেসেজে একজন নাবিক বলেন, আমাদের জন্য দোয়া করিও। সোমালিয়ার জলদস্যুরা অ্যাটাক করেছে। অলরেডি আমরা অ্যারেস্টেড। আমাদের এক জায়গায় বন্দি করে রাখছে। মনে হচ্ছে নিয়ে যাবে আমাদের। ওরা বোট উঠিয় ফেলছে অলরেডি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পাঠানো নাবিকদের বেশ কয়েকটি ভয়েস মেসেজ আমাদের হাতে এসেছে।
এর একটিতে ভুক্তভোগী নাবিককে বলতে শোনা যায়, ‘জলদস্যুরা আমাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা সবাই ব্রিজে আটক আছি। আমি এখন ওয়াশরুমে এসে আপনাকে ভয়েস দিচ্ছি। ওদের সবার কাছে গান আছে।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটি দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।
বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।
এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওইসময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।
নয়াশতাব্দী/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ